ফেসবুকে ৫ কোটি টাকার প্রতারণা, বাংলাদেশিসহ ১২ নাইজেরিয়ান গ্রেপ্তার
একটা অফিস। সেখানে কাজ শুধু ফেসবুকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যাট করা। এভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার জাল বিছিয়ে বন্ধু তৈরি করে অভিনব পদ্ধতিতে দুই মাসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ অভিযোগে ১২ নাইজেরিয়ান ও এক বাংলাদেশির একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তা।
সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল হায়দার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্বের নামে অনেক লোকের কাছ থেকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত নাইজেরিয়ার নাগরিকরা হলেন- নন্দিকা কেনেন্ট, ক্লেটাস আছুনা, ওইউকুলভ টিমটি, একিন উইসডোম, চিগোজি, ইভুন্ডে গ্যাব্রিল ওবিনা, স্যালেস্টাইন প্যাট্রিক, মর্দি ন্যামডি, ওরদু চুকওরদু সাম্মি, ডুবুওকন সোমায়ইনা, জেয়েরেম প্রেসিয়াস একমি, ওক উইসডম।
এ ছাড়া, রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন (২৭) নামের এক বাংলাদেশি নারীকেও গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ওই নারী নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে জানায় সিআইডি।
সিআইডি কর্মকর্তা রেজাউল বলেন, এই চক্রের সদস্যরা নিজেদের আমেরিকান অথবা ব্রিটেনের নাগরিক পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করেন। বিদেশ থেকে দামি উপহারের লোভ দেখানোর কৌশল ব্যবহার করেন তারা।
প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ক্যাথরিন কুলেন সোফিয়া নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ভুক্তভোগীর সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করা হয়। এক মাস ধরে তাদের মধ্যে ফেসবুকে কথাবার্তা হওয়ার পর, বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসেবে ভুক্তভোগীকে সোফিয়া দামি উপহার পাঠাবে বলে জানায়। উপহারের মূল্যমান ১০ লাখ ডলারের হবে উল্লেখ করে, সেটি চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের কাস্টমস অফিস থেকে সংগ্রহ করতে বলে।
অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, কিছুদিন পর, রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাকে জানায়, বিদেশ থেকে আসা উপহার নেওয়ার জন্য চার লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। এজন্য, ভুক্তভোগীকে কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বরও দেওয়া হয়। অন্যথায়, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় ফারজানা।
আস্থা অর্জনের জন্য তারা কোনও নগদ টাকা লেনদেন করে না এবং টাকা দেওয়ার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে, যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, ভুক্তভোগী ফারজানার দেওয়া অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন এবং তারপর থেকেই চক্রের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর, ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন এবং তখন তিনি থানায় অভিযোগ জানান।
'এভাবে একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এরা গত দুই মাসে শতাধিক লোককে প্রতারণা করে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে,' অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া নাইজেরিয়ানদের মধ্যে মাত্র তিন জনের পাসপোর্ট থাকলেও ভিসা নেই বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, 'বাকিদের কাছে পাসপোর্ট পর্যন্ত নেই। আমরা তথ্য পেয়েছি যে তাদের আরও সহযোগী আছে। তাদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।'
রেজাউল বলেন, 'আগে আমরা জানতাম এই ধরনের আলাদা আলাদা ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, অফিস খুলে সংঘবদ্ধ চক্রের এভাবে প্রতারণার বিষয়টি এই প্রথম সামনে এলো।'
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের চাকরি দেওয়ার নামে, তাদের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা জমা করা হয়।
'তাদের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদেরও আমরা খুঁজছি,' যোগ করেন তিনি।
এর আগে, গত ২ জুলাই ফেসবুকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সিআইডি আরও তিন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছিল।
Comments