কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার আরও অবনতি হয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির। ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে জেলার আরও ১৬টি নদীর পানি। এখনো বাড়িঘর ছাড়ছেন পানিবন্দি মানুষেরা। দীর্ঘমেয়াদি বন্যার ধকলে নাভিশ্বাস অবস্থা জেলার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বানভাসি মানুষের। সেই সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পরছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ। মাঠে কাজ করছেন ৩৫ সদস্যের মেডিকেল টিম।
বাঁধের ওপর ঝুপড়ি করে কোনোরকমে দিনযাপন করছেন ফাতেমা বেগমের মতো আরও অনেক বানভাসি। ছবি: স্টার

নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার আরও অবনতি হয়েছে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির। ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে জেলার আরও ১৬টি নদীর পানি। এখনো বাড়িঘর ছাড়ছেন পানিবন্দি মানুষেরা। দীর্ঘমেয়াদি বন্যার ধকলে নাভিশ্বাস অবস্থা জেলার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বানভাসি মানুষের। সেই সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পরছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ। মাঠে কাজ করছেন ৩৫ সদস্যের মেডিকেল টিম।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ধরলা নদীর তীরে চর সোনাইগাজীর বানভাসি ফাতেমা বেগম (৫৮) বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ১০ জুলাই থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়িতে আছি। বৃষ্টি আসলে আমাদেরকে নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হয়। বাড়ির ভেতর এখনো বুকসমান পানি থইথই করছে। ঘরে খাবার না থাকায় তাদেরকে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা এখনো আমাদের ভাগ্যে জোটেনি।’

একই এলাকার বানভাসি কোহিনুর বেওয়া (৬৪) বলেন, ‘আর কতদিন এভাবে বাঁধের ওপর পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকতে হবে জানি না। প্রথম দফা বন্যা ২০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ছিল। আর এখন দ্বিতীয় দফা বন্যায় ১০ জুলাই থেকে। এতদিন পর্যন্ত বাঁধে রয়েছি। ঠিকমতো খাওয়া নেই, ঘুম নেই। সবকিছুই অশান্তিতে চলছে।’

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চর বিলপাড়া এলাকার করিমুন্নেছা বেওয়া (৬৫) জানান, তিনি তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। বাড়ির চারদিকে বানের পানি থইথই করছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নদীর পানি পান করার কারণেই তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

একই উপজেলার চর সাজাইয়ের ফরহাদ হোসেন (৪৪) বলেন, ‘আমার দেড় বছরের শিশুর ডায়রিয়া হয়েছে। আমিও আমাশয়ে ভুগছি। এলাকায় প্রায় বাড়িতে বাড়িতে পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।’

চর কোদালকাটি মন্ডলপাড়া এলাকার স্বেচ্ছাসেবক আমিনুর রহমান (৫০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি উপজেলা হাসপাতাল থেকে কিছু খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এনেছি এবং নিজের অর্থে কিছু কিনেছি। আমি নিজ দায়িত্বে নৌকায় চড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর এলাকায় গিয়ে পানিবন্দি বানভাসিদের মাঝে খাওয়ার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দূষিত পানি পান করা ও আর টয়লেটের অভাবে যত্রতত্র মলমুত্র ত্যাগ করায় বন্যা দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।’

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫ জন ডায়রিয়া রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। ৩৫ সদস্যের স্পেশাল মেডিকেল টিম কাজ করছে মাঠে। এ ছাড়া, মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষভাবে সতর্ক বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করার জন্য।’ 

বন্যাদুর্গত এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত অন্যান্য রোগনিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিভাগ সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সকাল ৬টা থেকে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ নদ-নদীর পানি বেড়েছে এবং এই বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

5m ago