গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং ও বাজারের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ ও ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান এবং বাজার বসানো হয়েছে। সড়কের কোনো কোনো অংশে প্রতিনিয়ত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এতে পথচারী ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা।
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ ও ফুটপাত দখল করে প্রতিনিয়ত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। ছবি:স্টার

গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশ ও ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান এবং বাজার বসানো হয়েছে। সড়কের কোনো কোনো অংশে প্রতিনিয়ত গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। এতে পথচারী ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিষয়টি ব্যবসায়ী, বাজার ইজারাদার, হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কেউই অস্বীকার করছেন না। তবে নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়ারও দারি করছেন তারা।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া, ফুওয়াং টাইলস মার্কেট, ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, নতুনবাজার, শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসেতুর দুই পাশ, নয়নপুর, জৈনাবাজার এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

সড়ক ও ফুটপাত দখলের ব্যাপারে ব্যবসায়ী এবং বাজার ইজারাদার পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। প্রশাসন দাবি করছে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মহাসড়কের কোনো অংশ ইজারা দেওয়া হয়নি। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি কমছে না।

বাঘেরবাজার ও ভবানীপুর বাজারের একাধিক বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, মহাসড়ক তথা সড়ক ও জনপথের জায়গায় তারা ব্যবসা করেন। তারা ব্যবসায়ের ধরণ ও আকার ভেদে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা জামানত, তিন থেকে ছয় হাজার টাকা মাসিক ভাড়া এবং প্রতিদিন ২৫ থেকে ৫০ টাকা খাজনা দেন।

ঢাকা-ফুলবাড়িয়া সড়কের আলম এশিয়া পরিবহনের চালক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘সড়কের পাশে গড়ে উঠা অস্থায়ী এসব দোকানপাটগুলো এখন আর অস্থায়ী নয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা পণ্য সাজিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানপাটের জন্য যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও দুর্ঘটনা ঘটছে।’

গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজারের ইজারাদার সফিকুল ইসলাম সফিক বলেন, ‘সরকারি নিয়মানুযায়ী তিনি বাজার ইজারা নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন। বাজারে যারা জমির মালিক তারা তাদের দোকানঘরের সামনের সরকারি বা ইজারাকৃত জায়গা জোর করে মোটা অংকের জামানত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকেন। এছাড়া বাজার বাসানোর সরকারি বাড়তি কোনো জায়গাও নেই। বাধ্য হয়ে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা মহাসড়কের অংশ বিশেষ ও ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে বসে। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই।’

হোতাপাড়ার বাসিন্দা সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শাহান সাহাবুদ্দিন গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত গাজীপুরে যানবাহনের সংখ্যা যেমন বেশি পথচারীদের সংখ্যাও অনেক বেশি। তাদেরকে অনেক ঝুঁকির মধ্যে চলাফেরা করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।’

বাঘেরবাজার এলাকায় প্রায়ই পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন ট্রাকচালক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের দুইপাশে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে সড়কেই গাড়ি পার্কিং করতে হয়।’

ট্রাক শ্রমিক ফেডারেশন মাওনা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি ও শ্রীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিংয়ের জন্য কোনো নির্ধারিত জায়গা বরাদ্দ নেই। সাধারণত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশেই ট্রাকগুলো পার্কিং করা হয়। বহুবার শ্রীপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিকভাবে ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সংগঠনের অধীনে কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক রয়েছে। এছাড়া ভাসমান ট্রাক রয়েছে কমপক্ষে দেড় হাজারের মতো।’

গাজীপুর অঞ্চলের মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন বলেন, ‘মাওনা চৌরাস্তা কাঁচাবাজারের জন্য মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং বাড়ছে। সড়কের ওপর এবং ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করার কিছুক্ষণ পরই আবার এসে দোকান সাজিয়ে বসে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল জাকী বলেন, ‘১৪২৭ বাংলা বর্ষে গাজীপুর সদর উপজেলায় আটটি হাটবাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে অবশ্যই পেরিফেরিভুক্ত হাটবাজারগুলোকে আমরা ইজারা দিয়ে থাকি। পেরিফেরিভুক্ত মানে হচ্ছে খাস জায়গা, যা বাউন্ডারি করা ও নামজারী করা। এতটুকু জায়গার মধ্যেই হাটবাজার বসার কথা। এর বাইরে বা মহাসড়কের কোনো জায়গা উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজার বসানোর জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। মহাসড়কে বাজার বসানো আইন বিরোধী। আমরা নিয়মিত মহাসড়কে বসা দোকানপাটে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আসছি।’

Comments

The Daily Star  | English
BTCL Logo

BTCL’s Tk 463Cr 5G Project: Huawei’s win marred by controversy

It is often said that government files move at a snail’s pace in Bangladesh, slowing down the speed of project implementation.

10h ago