আর্টিকেল নাইনটিনের আলোচনা

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি’

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার ও বৈষম্যমূলক প্রয়োগের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা।

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার ও বৈষম্যমূলক প্রয়োগের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা।

রোববার রাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকি’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এই দাবি ও আহ্বান জানানো হয়। এ আইনে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে অবিলম্বে জামিনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ থেকে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি নির্বাহী পরিচালক ও  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের উদ্যোগ নিতে তারা জাতীয় সংসদ, উচ্চ আদালত, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বার কাউন্সিলসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচকরা বলেন, সংক্রামক মহামারি চলাকালীন মত প্রকাশের কারণে কাউকে জেলে আটকে রাখা অযৌক্তিক। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এমন কোনো দাবি কেউ তোলেনি যে এই আইনে অভিযুক্তরা কারাগার থেকে বেরিয়ে এলে কারও ক্ষতির কারণ হবেন। তাই অবিলম্বে জামিনের দাবি জানান তারা।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মত প্রকাশজনিত কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ১১৩টি মামলার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় ডিজিটাল এই আলোচনা অনুষ্ঠানে।   

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এই আইন দেশের গোটা ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমকে বড় রকমের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই আইনের ২১ ধারার আওতায় কেউ মামলা করতে গেলে, কোনও থানা পুলিশের পক্ষে সেই মামলা গ্রহণ না করা অসম্ভব ব্যাপার।’

দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর নীরবতায় হতাশা প্রকাশ করে সারা হোসেন বলেন, ‘এতো সমালোচনা হচ্ছে, তবুও আইন পর্যালোচনায় জাতীয় সংসদের কোনো উদ্যোগ নাই। অন্য অনেক বিষয়ে উচ্চ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ভূমিকা রাখলেও, এক্ষেত্রে তারা ব্যতিক্রম। কোভিডের সময় এই আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নীরব। ভুক্তভোগী কারাবন্দীদের পক্ষে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।’

জেল-জরিমানা নির্ধারণে এই আইনে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোন কোনো অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে জরিমানা ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা একজন ব্যক্তির আয় করতে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে। বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অপরাধের জেল-জরিমানা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসের সাজার চেয়ে বেশি হয়েছে। একই অপরাধ মুদ্রণ মাধ্যমে করলে সাজা কম আর অনলাইনে করলে সাজা বেশি, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার বিপরীত।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে পাঠদানের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষক এই আইনটিকে মনস্তাত্ত্বিক বাধা হিসেবে দেখছেন। এই আইনের যে সমস্ত বিষয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট, তা ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের সংশোধনের মাধ্যমে করা সম্ভব।’

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka stares down the barrel of water

Once widely abundant, the freshwater for Dhaka dwellers continues to deplete at a dramatic rate and may disappear far below the ground.

5h ago