‘হামরা কোন দিন বাড়িত যামো?’

‘হামরা কোন দিন বাড়িত যামো, মা,’- দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া রাব্বি (৮) তার মায়ের কাছে জানতে চায়। ‘ম্যালা দিন মুই পড়বার পাবার নাগছোং না।’
কুড়িগ্রাম-রমনা রেলরুটের বালাবাড়ী স্টেশন থেকে রমনা স্টেশন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জুড়ে রেল লাইনের ওপর অস্থায়ী আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন বন্যা দুর্গতরা। ছবিটি আজ চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের কুসটারী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘হামরা কোন দিন বাড়িত যামো, মা,’- দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া রাব্বি (৮) তার মায়ের কাছে জানতে চায়। ‘ম্যালা দিন মুই পড়বার পাবার নাগছোং না।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের কুড়িগ্রাম-রমনা রুটের কুসটারী এলাকায় রেল লাইনের উপর আশ্রয় নেওয়া বানভাসি মা রোকেয়া বেগম (৩৫) তার শিশুপুত্রের জবাবে আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষার কথা বলেন।

রোকেয়া বেগম জানান, তারা গেল এক মাস ধরে বাড়ি ছাড়া। রেল লাইনের উপর পলিথিন দিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে থাকছেন। বড় ছেলে রাসেল (১৪) অষ্টম শ্রেণিতে, মেয়ে মিষ্টি (১০) পঞ্চম শ্রেণিতে আর ছোট ছেলে রাব্বি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বন্যার তাদের বই, খাতা, কলম কোথায় আছে সেটিও জানা নেই। এই অস্থায়ী আশ্রয়ে পড়ালেখা করার সুযোগও নেই।

‘বাড়ি থাকি বানের পানি নামি গেইলে হামরা বাড়িত যামো। এ্যালাং কবার পাবার নাগছোং না কোনদিন হামরা বাড়ি যামো,’ জানালেন বানভাসি এই নারী।

উপজেলার বালাবাড়ী স্টেশন থেকে রমনা স্টেশন পযর্ন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে রেলপথে অস্থায়ী আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার বানভাসি পরিবারের প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে আছে। ঝুঁপড়ি ঘরে তাদের সবাইকে এক সাথে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর বই খাতাও ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।

দিনমজুর আব্দুল খালেকের ছেলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম (১৫) বলেন, এমনিতেই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের স্কুল বন্ধ তার উপর বন্যা আসার পর বাড়িতেও তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাস করতে হচ্ছে রেল লাইনের উপর। বই খাতা বেঁধে রাখা হয়েছে সুটকেসে। অস্থায়ী আশ্রয়ে পড়াশুনা করার কোন সুযোগ ও পরিবেশ নেই। যতদিন বাড়িতে ফেরা না হচ্ছে ততদিন পড়াশুনারও কোন সুযোগ নেই।’

কৃষক আফজাল শেখের ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নবিউল শেখ জানায়, তার কিছু বই খাতা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখনো বই কেনা হয়নি। অস্থায়ী আশ্রয় ঝুঁপড়ি ঘর থেকে বাড়ি ফেরা হলে তারপর বই কেনা হবে। ‘এখানে আমরা পড়াশুনা করতে পারছি না। পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা,’ জানায় নবিউল।

বানভাসি জুলহাস সরকার (৫৮) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। অনেক বাড়ি-ঘর থেকে বানের পানি নামতে শুরু করায় তারা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তাদের বাড়ি-ঘর থেকে বানের পানি নেমে গেলে তারাও বাড়িতে ফিরবেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার ১২৪০টি বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বন্যার্ত পরিবারের। বন্যার কারণে এসব শিশু বাড়িতেও পড়াশোনা করতে পারছে না।

৬০ টি বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে আর ৬টি বিদ্যালয় গেল এক মাসে নদ-নদী গর্ভে চলে গেছে বলেও তিনি জানান।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি কমলেও এখনো কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।' 

অস্থায়ী আশ্রয় থেকে বানভাসি লোকজন গতকাল বিকাল থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, 'আগামী দুই দিনের মধ্যে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Jatiya Party announces candidates for 289 seats

National polls: AL wants to sit with Jatiya Party tomorrow, says Chunnu

Awami League wants to sit with the main opposition Jatiya Party tomorrow to discuss various issues regarding the January 7 national election.

44m ago