‘২০ লাখ টাকা ঠিকই নিলেন কিন্তু ছাত্রলীগে পদ দিলেন না’

হবিগঞ্জে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলে এক শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি এই টাকা নিয়েছেন।’ এ বিষয়ে মুখ না খুলতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহতাবুর আলম জাপ্পি মাধবপুরের মনতলা কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। গত বছরের শেষ দিকে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়ার কথা উঠে। ছোটভাই জাপ্পির আবদার রাখতে গিয়ে বড়ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন।
তাদের দাবি অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রায় ১১ লাখ নিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি নিয়েছেন নয় লাখ টাকা।
জাপ্পি বলেন, ‘টাকা লেনদেন হওয়ার পর গত ১৮ মে দলীয় প্যাডে আগামী এক বছরের জন্য মাধবপুর উপজেলা শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে শহীদ আলী শান্তকে সভাপতি ও মাহতাবুর আলম জাপ্পিকে সাধারণ সম্পাদক দেখানো হয়।’
‘ওই কমিটি ঘোষণার কাগজের নিচে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি সই করে আমার ভাই শাহীনের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। কিন্তু, ওই কমিটি দলীয়ভাবে প্রকাশ না করায় আমার সঙ্গে সাইদুর ও মাহির মতবিরোধ দেখা দেয়। তারা ২০ লাখ টাকা ঠিকই নিলেন কিন্তু ছাত্রলীগে পদ দিলেন না,’ যোগ করেন তিনি।
জাপ্পির ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শাহীন গতকাল টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি সরল বিশ্বাসে সাইদুর ও মাহিকে টাকা দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি তারা তা আত্মসাৎ করবে। এখন টাকা পেয়ে পদ তো দিচ্ছেই না, পাল্টা অস্বীকার করছে। অথচ আমার কাছে যে এ সবের প্রমাণ রয়েছে তা তারা হয়তো জানে না।’
‘এখন বিভিন্নজনকে দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে মুখ বন্ধ রাখতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেই বলেন, ‘এখন ব্যস্ত আছি।’ এ প্রতিবেদক পরে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাধবপুরে ছাত্রলীগের নতুন কোনো কমিটি দেওয়া হয়নি। আমি টাকা নিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।’
এ দিকে ছাত্রলীগ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গতকাল রাতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। একই সঙ্গে সংগঠনের নীতি আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকায় মাধবপুর উপজেলার কর্মী মাহতাবুর আলম জাপ্পিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।
Comments