কামাল দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে তার ওপর লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত। সে তার বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা আজ এ কথা বলেন।

শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামালের বহুমুখী প্রতিভা ছিল। একজনের মধ্যে এত গুণ ও প্রতিভার সমাহার সত্যিই বিরল।’

তিনি আরও বলেন, কামাল একদিকে যেমন ছিল একজন ক্রীড়া সংগঠক, ঠিক তেমনি অপর দিকে সংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তার বহুমুখী প্রতিভা। পাশাপাশি, রাজনীতিতেও সে দক্ষতা ও যোগ্যতার ছাপ রেখে গেছে।

রাজনীতি ও আন্দোলনে শেখ কামালের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছয় দফা দাবির সময় থেকে প্রতিটি সংগ্রাম ও আন্দোলনে কামাল সক্রিয় ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির পিতা গ্রেপ্তার হলে কামাল সে সময় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

তিনি বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে কামাল সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডিতে খেলাধুলার আয়োজন এবং আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা ক্রীড়াঙ্গনে কামালের সবচেয়ে বড় অবদান। মুক্তিযুদ্ধের পর কামাল আবাহনীকে আরও শক্তিশালী করে।

আবাহনীর জন্য কামালের গভীর ভালবাসা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে জার্মানি যাওয়ার আগে কামাল তাকে তার ক্লাবের ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য অ্যাডিডাস বুটস আনতে বলেছিল।

শেখ কামালের বড় বোন শেখ হাসিনা এ সময় বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, কামাল তার নিজের জন্য কখনোই কিছু চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল গান গাইত ও সেতার বাজাত। সে স্পন্দন শিল্প গোষ্ঠী’ নামে একটি ব্যান্ড সংগীতের দলও গঠন করে। পাশাপাশি, ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা রাখে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘কামাল আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার হাতে গড়া আবাহনী ও স্পন্দন এখনো আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কামাল আমার দুই বছরের ছোট ছিল। কিন্তু সে অনেক পরিপক্ক ও বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন ছিল। পাশাপাশি তার আরও অনেক গুণ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কামালের দায়িত্ববোধ ছিল। ছোটবেলা থেকেই মাকে সে ঘরের কাজে সাহায্য করতো।’

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, দেশব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহ্উদ্দিন এবং একাত্তর টেলিভিশনের এডিটর-ইন-চার্জ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মোজাম্মেল বাবু।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য হত্যার বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কখনই ভাবেননি যে তাদের এভাবে সবাইকে হারাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ কামালকে তারা হত্যা করে, যাদের সঙ্গে (কামাল) একজন সেনাকর্মকর্তা হিসেবে এবং ওসমানীর এডিসি হিসেবে, সে কাজ করেছে এবং একসঙ্গে থেকেছে।’

তিনি বলেন, তারা (খুনিরা) নিয়মিত তাদের বাড়িতে যেত। তাদের বাড়িতে খাবার ও নাশতা খায়নি এমন কেউই ছিল না। তারা কামাল ও জামালের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের গুলি চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু, যিনি দেশের মুক্তির জন্য তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তার সরকারের কাছ থেকে পদোন্নতি পাওয়া মেজর জিয়াসহ সেনা অফিসারদের একটি অংশ তাকে হত্যা করে।

তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং এমনকি তাদের স্বদেশে ফিরে আসতেও বাধা দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি তারা এমন একটি আইন কার্যকর করে যাতে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- যিনি জনগণ ও দেশের কল্যাণে তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন- তাঁর হত্যার বিষয়ে কোনো মামলা দায়ের করা না যায়।

তিনি বলেন, ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করার উদ্যোগ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে তাদের সেবা করার এবং বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচারের সুযোগ দেওয়ায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।

শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা, ভাই-বোনরা একসাথে খেলতাম, ঝগড়া করতাম। বয়সের দিক থেকে একে অপরের কাছাকাছি হওয়ায় পুতুলখেলার সময় কামাল আমাকে সঙ্গ দিতো এবং আমিও তার খেলার সময় তাকে সঙ্গ দিতাম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামালের জন্মের পর থেকে আব্বা অধিকাংশ সময় কারাগারে ছিলেন বলে কামাল আমার কাছ থেকে আমার আব্বাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকার অনুমতি চেয়েছিল।’

তিনি বলেন, কামাল ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই সুলতানা কামালের সঙ্গে এবং জামাল ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই রোজির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সকলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। ‘একবার ভাবুন, এটা কী রকম নিষ্ঠুরতা!’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিরা ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেলসহ কয়েকটি শিশুকেও হত্যা করে।

তিনি যোগ করেন, ‘আমার মা যিনি সবসময় বাবাকে তার প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করতেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী তার ছোট ভাই শেখ কামালের ৭১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা জানান।

পরে তিনি শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি স্মৃতিগ্রন্থেও মোড়ক উন্মোচন করেন।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

5h ago