শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কাছারি ঘর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
কবিগুরু রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে এসেছেন বহুবার। জমিদারি কাজের জন্য শাহজাদপুর আসলেও এ অঞ্চলের মাটি-মানুষের প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা।
রবীন্দ্রস্মৃতি বিজরিত এই কাছারি বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এখনো তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কাছারি ঘরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
কাছারি ঘরটি ঘুরে দেখা গেছে এর পশ্চিম দিকের মূল ঘরের বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরের পুরনো দেয়ালের বেশিরভাগ অংশসহ নষ্ট হয়ে গেছে পুরনো দরজা-জানালা।
মেরামত ও সংরক্ষণের অভাবে মূল কাছারি ঘরটি পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভবনে।
সংরক্ষণ করা না হলেও পরিত্যক্ত ঘরটির দেয়ালে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন এটিই ছিল কবিগুরুর ঐতিহাসিক কাছারি ঘর। এখানেই প্রজারা আসতেন খাজনা দিতে, কবিগুরুর সঙ্গে তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলতে।
ঐতিহাসিক ঘরের এমন দুর্দশায় মর্মাহত কবিগুরুর ভক্ত ও রবীন্দ্র গবেষকগণ। অবিলম্বে এটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবীন্দ্র-গবেষক হাবিবুর রাহমান স্বপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলে জমিদারির কাজে আসলেও শাহজাদপুরের মাটি-মানুষ তাকে আপ্লুত করেছে। প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনে কবি তাদের খাজনা মওকুফ করে দিতেন। প্রজাদের জীবনের অভিজ্ঞতা কবি তার অনেক লেখায় তুলে ধরেছেন। এ সবই হয়েছে ঐতিহাসিক কাছারি ঘরকে কেন্দ্র করেই।’
কবিগুরুর স্মৃতি ধরে রাখতে অবিলম্বে ঘরটি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানান তিনি।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কবিগুরু তার বিসর্জন, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, গোলাপগুচ্ছ, ছিন্নপত্রসহ অনেক কাব্যগ্রন্থ এই শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে লিখেছেন।’
‘কবিগুরু তার নিজ লেখনিতে শাহজাদপুর কাছারি বাড়ির প্রশংসা করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ তার ভাতিজি ইন্দিরা দেবীর কাছে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন যে তিনি এখানে লেখার এমন অনুপ্রেরণা পান যা অন্য কোথাও পান না।’
মূল কাছারি ঘরটি সংস্কার-সংরক্ষণ করে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হলে কবিগুরুর জীবন-কর্ম ও সেই সময়ের জীবনযাত্রার অনেক কিছুই জানা যাবে বলে মনে করেন ড. আলিম।
কাছারি ঘরের কাস্টডিয়ান মো. জায়েদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কবিগুরুর মূল কাছারি ঘরটি সংস্কার-সংরক্ষণ করার জন্য ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিভাগের প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করে মতামত দেওয়ার পর তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ শুরু হবে।’
কবে নাগাদ প্রকল্প অনুমদন হয়ে সংস্কার-সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
ঐতিহাসিকদের মতে, কবিগুরুর দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪০ সালে নাটোরের রানি ভবানীর কাছ থেকে শাহজাদপুরের জমিদারি কিনেন। পরে তা উত্তরাধিকার সূত্রে কবিগুরুর ওপর ন্যস্ত হয়।
Comments