জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘ডেল্টা তহবিল’ গঠন করবে সরকার

স্টার ফাইল ছবি

পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দুর্যোগ মোকাবিলার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত মহাপরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নের জন্য ‘বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।

ইউএনবির প্রাপ্ত অফিসিয়াল নথি অনুসারে, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও প্রচুর নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

নথিতে বলা হয়, ‘এর জন্য, বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে।’

তথ্য অনুসারে, ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত মোট জাতীয় আয়ের (জিএনআই) ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রয়োজন হবে। বর্তমানে, এ খাতে ব্যয় মাত্র ০ দশমিক ৮০ থেকে ১ শতাংশ।

পরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামোগত এবং ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণা। এজন্য ২ হাজার ৯৭৮ বিলিয়ন টাকা (প্রায় ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রয়োজন হবে।

সূত্র অনুসারে, এ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ভিন্ন ভিন্ন বছরে শুরু হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরে আগামী ১০০ বছরে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ‘বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ অনুমোদন’ করে।

তথ্য অনুসারে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং নদীর তীর ভাঙন বাংলাদেশের নিত্য সঙ্গী।

ডেল্টা পরিকল্পনায় তিনটি উচ্চতর জাতীয় লক্ষ্য এবং ছয়টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

উচ্চ-স্তরের লক্ষ্যগুলো হলো: ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হয়ে ওঠা।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো: বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানির নিরাপত্তা ও ব্যবহারে আরও দক্ষতা অর্জন, একীভূত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা, জলাভূমি সংরক্ষণ ও পরিবেশের সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কার্যকর আন্তদেশ ও আন্তদেশীয় পানিসম্পদ নিশ্চিতকরণ এবং ভূমি ও পানিসম্পদের একীভূত ব্যবহারের সর্বোচ্চ স্তর নিশ্চিতকরণের জন্য সংগঠন এবং ন্যায়সঙ্গত সুশাসনকে নিশ্চিত করা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের মতে, ডেল্টা প্ল্যান জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ৩৩ ধরনের ঝুঁকির ভিত্তিতে দেশকে ছয়টি হটস্পটে বিভক্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনার আওতায় আছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা, যা দেশের ভূমি এলাকার ৯১ দশমিক ৫ শতাংশেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে ঘিরে রেখেছে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে সরকার খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ডেল্টা পরিকল্পনা সম্পর্কিত ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল।

উপকূলীয়, বরেন্দ্র এবং খরা-প্রবণ হাওর ও বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নদী এবং শহর অঞ্চলগুলো ডেল্টা পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পাবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ১৬টি জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল, যেখানে দারিদ্র্যের হার খুব বেশি সে এলাকাগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ডেল্টা প্ল্যান আসন্ন অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেবে।

ভারত, ভুটান, মিয়ানমার এবং চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সাধারণ নদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সহযোগিতা চাইবে।

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

6h ago