বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: আইনের রক্ষক আইনের ভক্ষক হতে পারে না

‘ক্রসফায়ার’ এখন নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনা হয়ে উঠেছে। পত্রিকার শিরোনামে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় ক্রসফায়ারের খবর। কর্তৃপক্ষ এসব ক্রসফায়ারের ঘটনার ব্যাখ্যা দেন প্রায় একই ভাবে। আর এসব ক্রসফায়ারকে ন্যায়সঙ্গত বলে প্রমাণ করার জন্য নিহত ব্যক্তির অতীতের কর্মকাণ্ড সকলের সামনে তুলে ধরা হয়। আমরা নিরন্তর এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করে আসছি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিচারক, জুরি এবং জল্লাদ হিসেবে আচরণ করা বন্ধ না করবে ততক্ষণ আমরা এ বিষয়ে কথা বলে যাব।

‘ক্রসফায়ার’ এখন নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনা হয়ে উঠেছে। পত্রিকার শিরোনামে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় ক্রসফায়ারের খবর। কর্তৃপক্ষ এসব ক্রসফায়ারের ঘটনার ব্যাখ্যা দেন প্রায় একই ভাবে। আর এসব ক্রসফায়ারকে ন্যায়সঙ্গত বলে প্রমাণ করার জন্য নিহত ব্যক্তির অতীতের কর্মকাণ্ড সকলের সামনে তুলে ধরা হয়। আমরা নিরন্তর এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করে আসছি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিচারক, জুরি এবং জল্লাদ হিসেবে আচরণ করা বন্ধ না করবে ততক্ষণ আমরা এ বিষয়ে কথা বলে যাব।

সেভাবে ঘটনাগুলোর বিবরণ দেওয়া হয় তাতে ‘ক্রসফায়ার’ শব্দটির অর্থ বুঝতে আমাদের একটু সমস্যা হয়। শব্দটির অর্থ হিসেবে যদি এগুলো সত্যিই গুলি বিনিময়ের ঘটনা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহতের মরদেহের সঙ্গে তেমন কোনো অস্ত্র বা প্রাণঘাতী অস্ত্র কেন পাওয়া যায় না? এই ঘটনাগুলোর যে বিবরণ দেওয়া হয় তা কেবল অতি বিশ্বাসীরাই বিশ্বাস করবে। সেই সঙ্গে এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়ছেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বা হচ্ছে বলে দাবি করা কোনো সমাজ এমন পরিসংখ্যান বজায় রাখতে পারে না। ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন, ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন এবং এ বছর জুলাই পর্যন্ত ১৯৬ জন মারা গেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বুলেটের আঘাতে। ২০১৮ সালে যখন সরকার মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করে তখন এই ক্রসফায়ারের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।

এমন ঘটনায় মৃতরা শুধু সংখ্যাই হয়ে আছেন। কারণ এসব ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হয় না। যেখানে এমন প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে বিচারিক তদন্ত হওয়া উচিত।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মারাত্মক পরিণতি ঘটাচ্ছে। আইনি বিবেচনায় এগুলো অবৈধ। কারণ এটি একজন মানুষের সবচেয়ে বড় মৌলিক অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার-কেড়ে নিচ্ছে। অথচ এই অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। রাষ্ট্র উল্টো সেই অধিকার হরণ করছে। যখন কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা এই অধিকার কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনের উপর জনসাধারণ আস্থা হারাচ্ছে। এমনকি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা কমছে আন্তর্জাতিকভাবেও। আমাদের দেশে যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত তা বিশ্বাস করা অন্যান্য দেশের পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠছে। যা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে বৈদেশিক বিনিয়োগে। সর্বোপরি, আইন ভেঙ্গে আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তি দেওয়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনোভাবেই উচিত না।

Comments

The Daily Star  | English

Road Surface Melting: Bargain bitumen failing to bear extreme heat

As the country is baking in heatwave, road surfaces in several districts have melted due to what experts say is the use of bitumen that cannot withstand this extreme heat.

5h ago