পৌরসভার ময়লা-আবর্জনায় দূষিত বুড়ি তিস্তার পানি, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক প্রবাহ

পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বুড়ি তিস্তায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামের উলিপুরের গুনাইগাছ ব্রিজ এলাকায় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বুড়ি তিস্তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নদীর পানি নোংরা ও দূষিত হয়ে গেছে। স্থানীয়রা পৌর মেয়রের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কোনো ফল আসেনি।

বুড়ি তিস্তায় পানি প্রবাহ গতিশীল রাখতে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৩১ কিলোমিটার খনন কাজ করেছে। 

গুনাইগাছ ব্রিজ এলাকার ব্যবসায়ী খোকন রায় বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা গাড়ি এসে এসব ময়লা-আবর্জনা বুড়ি তিস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। এসব ময়লা-আবর্জনার গন্ধে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছি।’

একই এলাকার আরেক ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বুড়ি তিস্তায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর পানি এমন নোংরা হয়েছে আমরা পানিতে নামতে সাহস পাচ্ছি না। ব্রিজ এলাকার পরিবেশ নোংরা আর গন্ধে ভরে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল হক জানান, গুনাইগাছ ব্রিজের কাছ পাশ দিয়ে হাটার সময় নাক চেপে ধরতে হয়। কারণ পৌরসভার ফেলা ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ আসে। সুস্থভাবে শ্বাস নিতে মানুষ নদীপাড়ে আসে অথচ বুড়ি তিস্তাপাড়ে এলে শ্বাস বন্ধ করতে হয়। পৌরসভার ময়লা-আবর্জনাই এজন্য দায়ী।

ময়লা-আবর্জনার গাড়ি এসে এসব ময়লা-আবর্জনা বুড়ি তিস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। ছবি: এস দিলীপ রায়

উলিপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবিবা পলি বলেন, ‘পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বুড়ি তিস্তা আবারও মরতে বসেছে। স্থানীয়রা যেখানে আন্দোলন করে নদীটির খনন কাজ করিয়েছে, সেখানে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বুড়ি তিস্তাকে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বুড়ি তিস্তার পানি নোংরা হয়ে গেছে। নদীর পানিতে নামার মতো অবস্থা নেই। নদীপাড়ে গেলে গন্ধে নাক চেপে ধরতে হচ্ছে।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। বুড়ি তিস্তায় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলবে না এমন কথাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’

বুড়ি তিস্তার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ও নদীর পানি যাতে নোংরা না করা হয় সেজন্য ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে পৌর কর্তৃপক্ষকে আবারও সতর্ক করবেন বলে ইউএনও জানান।

ব্রিজ এলাকার পরিবেশ নোংরা আর গন্ধে ভরে গেছে। ছবি: এস দিলীপ রায়

তবে, উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবু আলা ময়লা-আবর্জনা ফেলার কথা অস্বীকার করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গুনাইগাছ ব্রিজ এলাকায় ইটের কিছু রাবিশ ফেলা হয়েছে, যাতে বুড়ি তিস্তার পানির আঘাতে ব্রিজের কোনো ক্ষতি না হয়।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সম্প্রতি ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীটিতে খনন কাজ করা হয়েছে। পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত ও পানি নোংরা করবে এটা মানা যায় না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে উলিপুর মেয়রকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করবেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় আ. লীগ সংসদ সদস্য এম. এ মতিন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সতর্ক করেছি। তারপরও পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা বুড়ি তিস্তায় ফেলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে নদীর পানি নোংরা করা হচ্ছে। বুড়ি তিস্তাকে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনার করালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago