ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রুটে রেললাইন স্থাপনের দাবি
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের স্বরণে মানিকগঞ্জে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকায় নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও বৃক্ষ রোপন করেন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এর আগে, নিরাপদ সড়ক, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন স্থাপন এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।
তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন এই কর্মসূচির আয়োজন করে। জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি দীপক ঘোষ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন আনসারী, বারসিকের সমন্বয়কারী বিমল রায়, মানিকগঞ্জ লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ অনেকেই স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ঢাকা-আরিচা সড়ক প্রশস্ত করা হলেও এখনও দুর্ঘটনার হার কমেনি। রাজধানী ঢাকা সঙ্গে মানিকগঞ্জসহ পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঢাকা-আরিচা সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদুর ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে। যা সড়ক পথে মেটানো সম্ভব নয়। একমাত্র রেলপথ নির্মাণ করলেই এই সমস্যা দূর হবে। বক্তারা ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন স্থাপন ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগষ্ট ‘কাগজের ফুল’ নামের একটি চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে জোকায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের একটি বাসের সঙ্গে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জন।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঘিওর থানায় মামলা করে। বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর। রায়ের পর জামির হোসেনকে (৬০) প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরবর্তীতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছিল। কারাবন্দি বাসচালক শহীদ সোহরাওয়ার্দী হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ আগস্ট মারা যান।
এ ছাড়া, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাসমালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আলাদা দুটি মামলা করা হয়। পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে যায়। এই মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্ট শুনানি শেষে তারেক মাসুদের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রায় দেন। রায়ে তারেক মাসুদের পরিবারকে চার কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।
Comments