তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা সুখি বেগমরা

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নে তিস্তাপাড়ের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুখি বেগম তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়। ১৪ আগস্ট ২০২০। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘মুই আর কতবার বাড়ি ভাঙিম, বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে মোর সোগে শ্যাষ হয়া গ্যালো। এ্যালো মুই পথে ভিখারি হয়া গ্যানু,’ কেঁদে কেঁদে দ্য ডেইলি স্টারকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তিস্তাপাড়ের সুখি বেগম (৪৮)।

সুখি বেগমের বিয়ে হয়েছে ৩০ বছর আগে। এই সংসার জীবনে তাকে ২৮ বার নদীভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা হারাতে হয়েছে। বার বার বাড়ি-ঘর সরাতে গিয়ে দারিদ্রের কষাঘাতে তাকে শুধু বিষন্ন থাকতে হচ্ছে সর্বদাই।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নে তিস্তাপাড়ের দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুখি বেগম। স্বামী আব্দুস সামাদ একজন কৃষক। তার বসতভিটা তিস্তা গর্ভে চলে গেছে। বাড়ি-ঘর ভেঙে এখন তারা সরকারি রাস্তার ওপর। কয়েকদিন থেকে রাস্তার ওপরেই বসবাস করেছেন। এখন গ্রামের এক নিকট-আত্মীয়র একখণ্ড জমিতে ঘর তুলছেন।

‘হামার কী না আছিল। সোগে আছিল। বাড়ি ভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান, গোয়াল ঘর, গাছ-পালা সোগকিছুই। এ্যালা হামার কিছুই নাই। সোগে গ্যাইছে তিস্তার প্যাটোত। হামরা এ্যালা খাবারে পাবার নাগছি না,’ এমনি করে জানালেন সুখি বেগম।

‘মোর নামটাই খালি সুখি বেগম কিন্তু মোর কপালোত কোনদিন সুখ নাই। খালি দুখখো আর দুখখো,’ তিনি জানান। ‘কয়দিন আগোত তাও হামার নিজের এ্যাকনা বাস্তুভিটা আছিল তাও এ্যালা নাই। মাইনসের জমিত ঘর তুলি থুইছি। মোর দুখখের শ্যাষ নাই। তিস্তা মোক সুখি হবার দিলে না,’ আক্ষেপ করে বললেন সুখি বেগম।

সুখি বেগমের স্বামী আব্দুস সামাদ ডেইলি স্টারকে জানালেন, তিনি কৃষি কাজ করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সব আবাদি জমি এখন তিস্তার গর্ভে। কিভাবে সংসার চালাবেন, কিভাবে বেঁচে থাকবে সেটাও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর তিস্তার ভাঙনে বসতভিটা, আবাদি জমিসহ সবকছিু যেতে যেতে এখন আর কিছুই থাকেনি।

‘খালি কি মোর এ্যাকলার। তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার মানুষের দুর্গতি মোর মতোন,’ এমনটি জানিয়ে কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘তিস্তা নদীর বামতীরে বাঁধ না থাকায় তাদের বানের পানিতে ডুবতে হয়। বানের পানি নেমে গেলে নদীভাঙনের শিকার হতে হয়। এখনো যদি সরকার তিস্তার বামতীরে বাঁধ দেয় তাহলে অসংখ্য পরিবার রক্ষা পাবে এবং রক্ষা পাবে বসতভিটা। আবাদি জমি ও স্থাপনা-এমনটি দাবি জানালেন তিনি।

সুখি বেগমের মতো তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ এখন কাঁদছেন বসতভিটা, আবাদি জমি হারিয়ে। তারা ভূমিহীন নিঃস্ব হয়ে চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন মানবেতরভাবে।

মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিস্তা নদীর ভাঙনে আমাদের ইউনিয়নটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। তিস্তাপাড়ের মানুষ এখন আর ত্রাণের জন্য আসেন না, তারা শুধু বাঁধ চায়। তিস্তার বামতীরে বাঁধ দেওয়া হলে হাজার হাজার পরিবার রক্ষা পাবে নদীভাঙন ও বন্যা থেকে।’ তখন তাদের জীবন-জীবিকা স্বচ্ছল হয়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US officials preparing for possible strike on Iran in coming days, Bloomberg reports

Iran and Israel continue to attack each other on Wednesday night, as Donald Trump weighs US involvement

10h ago