প্রবাসে

প্রবাসে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে

দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস পালন। ছবি: লুৎফুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির জনককে মুজিব নামেই সারা পৃথিবী চেনে। কোটি প্রবাসী বুকের মধ্যে লালন করে বঙ্গবন্ধুকে। তাদের সিংহভাগ আছেন মধ্যপ্রাচ্যের নানাদেশে। এই দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীদের সন্তানরাও জানছে বঙ্গবন্ধুকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ স্কুলের সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা দ্বিতীয় প্রজন্ম জানছে। তবে যারা ভিনদেশি স্কুলে পড়ে তাদের কিন্তু সে সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে পরিবারই ভরসা।

জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির দূতাবাস এবং দুবাইয়ের কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে সবসময় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের তিনটি সামাজিক সংগঠন- বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবির কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ সমিতি ফুজিরা এবং বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে। একইসাথে আবুধাবি এবং রাস আল খাইমারের বাংলাদেশি স্কুলগুলোও দিনটি পালন করে। প্রবাসে আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ আছে। আছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। তারাও শ্রদ্ধার সাথে দিনটি পালন করে।

জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে অনেক সামাজিক সংগঠন এখন বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং আমিরাতের জাতির পিতার একটি যুগল ছবি ব্যানারে ব্যবহার করছেন। গত বছর আমিরাত সফরে এসে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এদেশের যুবরাজকে ছবিটা উপহার দিয়েছেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিবাচক সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ১৯৭৪ সালে। আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের আমন্ত্রণে ১৯৭৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সফর করেছিলেন আরব আমিরাতে। এই সুসম্পর্কের স্মৃতিচারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবার সফরে এসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের একটি আলোকচিত্র আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মাদ বিন জায়াদ আল নাহিয়ানকে উপহার দেন। এই ছবিটি এখন এই দেশের স্থানীয় প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোও দুই দেশের বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসাবে ফলাও করে প্রকাশ করে। পাশাপাশি অনেক সামাজিক সংগঠন ছবিটি ব্যবহার করে। কারণ বঙ্গবন্ধুর ওই সফরে আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

নতুন প্রজন্ম কতোটা জানে বঙ্গবন্ধুকে? সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে দুটি বাংলাদেশি স্কুল। একটি দেশটির রাজধানী আবুধাবিতে। অন্যটি উত্তর আমিরাতের রাস আল খাইমায়। রাস আল খাইমার স্কুলটি বঙ্গবন্ধু স্কুল নামে বিশাল সমারোহে নতুন রূপদানের লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এবং কমিউনিটির সহায়তায় এগিয়ে চলছে এর উন্নয়ন কাজ। এ দুটো স্কুলে যে বাচ্চারা পড়ে তারা বাংলাদেশে থাকা শিশুদের মতো দেশের ইতিহাস নিয়ে অনেক না জানলেও বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মোটামুটি জানে। 

দুবাইয়ের কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খান জানালেন, শারজাহ ও আজমান এলাকা নিয়ে একটি স্কুলের পরিকল্পনা আছে । বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ সে লক্ষ্যে কাজ করেও যাচ্ছে। ওই এলাকায় যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর বাস তাই কমিউনিটির মানুষ আশায় আছেন ওই এলাকায় বাংলাদেশি স্কুল হলে। বাচ্চারা দেশকে সহজে জানতে পারে।

আরব আমিরাতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিদেশে উচ্চ পদে আসীন। বাংলাদেশি এসব নাগরিকদের অনেকে জানে না দেশের ইতিহাস। বাংলাদেশি স্কুল কম থাকায় অন্য দেশের স্কুলে পড়ায় সে সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। এক্ষেত্রে পরিবারকেও ভূমিকা নিতে হবে। পরিবার থেকে দেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা দিবস এবং জাতির পিতা এসব বিষয় জানালে একটি বাচ্চার ভেতরে দেশপ্রেম তৈরি হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গত কয়েক বছর ধরে দিনটিতে প্রবাসীরা নানা উদ্যোগ নেয়। আমিরাত সরকার অনুমোদিত একমাত্র বাংলাদেশি চ্যানেল বায়ান্ন টিভিতে ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে একটি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে জাতির পিতা নিয়ে কথা ও কবিতা অনুষ্ঠান ছিল। আমাদের জাতির পিতাকে দীর্ঘদিন বইয়ের পাতায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে বিদেশে থাকা অনেকেই জানেন না অনেক কিছু।

কোন সন্দেহ নেই আমরা খুব আবেগি জাতি। আবেগই আমাদের ভাষা আর স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। এই আবেগকে ইতিবাচক কাজে লাগিয়ে দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির পিতাকে যথাযোগ্য সম্মান দেয়া একজন সুনাগরিকের কাজ।

আরব আমিরাত প্রবাসীরা অনেকেই হয়তো জানেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে আমিরাত সফরে এসে বাংলাদেশ সমিতি আর জনতা ব্যাংক করার প্রস্তাব রেখেছিলেন। এরপর আর্থিক এবং সামাজিক এই দুই প্রতিষ্ঠানই লাল সবুজের পতাকা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মরুর বুকে। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততোদিন থাকবে বঙ্গবন্ধু।

(লেখক: লুৎফুর রহমান, দুবাই প্রবাসী এবং সম্পাদক বায়ান্ন টিভি)

Comments

The Daily Star  | English

Lives on hold: Workers await reopening of closed jute mills

Five years on: Jute mill revival uneven, workers face deepening poverty

16h ago