‘ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসবে না স্বর্ণময়ী সরোবরের সেতুটি’
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ‘স্বর্ণময়ী সরোবর’-এর সৌন্দর্য বাড়াতে এর ওপর প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ‘স্বাধীনতা সেতু’ নামে একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণময়ী সরোবরের চারপাশে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে। সরোবরটির ওপর সৌন্দর্যের সেতু নির্মিত হলে এখানে ভিড় বেড়ে যাবে। এতে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত দিচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্বর্ণময়ী সরোবরে সেতু নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে ‘উলিপুর সচেতন মহল’ ব্যানারে গত ২৪ জুন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও ২৫ জুন উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) স্বারকলিপি দেওয়া হয়।
একই ব্যানারে ২৮ জুন স্বর্ণময়ী সরোবরপাড়ে মানববন্ধন করা হয়।
স্বারকলিপি ও মানববন্ধনে উলিপুরবাসী দাবি করেন, স্বর্ণময়ী সরোবরে সেতু তাদের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসবে না। সরোবরের ওপর সেতু নির্মিত হলে সরোবরটি এর ঐতিহ্য হারাবে।
গত ১৭ মার্চ কুড়িগ্রাম-৩ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এমপি অধ্যাপক এম এ মতিন স্বর্ণময়ী সরোবরের ওপর সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
অধ্যাপক এম এ মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বর্ণমযী সরোবরে “স্বাধীনতা সেতু” নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে যে কোনো মূল্যে।’
সেতুটিকে ‘উলিপুরের স্বার্থের ব্যাপার’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরোবরের ওপর যাতে সেতু নির্মিত না হয় সে জন্য কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু, তাদের সে ষড়যন্ত্র আমাদের রুখতে পারবে না।’
এমপি আরও বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ৮০ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’
সেতুটি নির্মাণে জেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া দিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অর্থ সহায়তায় স্বর্ণময়ী সরোবরে ‘স্বাধীনতা সেতু’ তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।
উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু পুরো বিষয়টি পরিচালনা করছেন জানিয়ে এমপি আরও বলেন, সরোবরের ওপর সেতু তৈরি হলে শিক্ষার পরিবেশে ক্ষতি হবে না বরং শিক্ষার পরিবেশ আরও সুঠাম হবে।’
উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বর্ণমযী সরোবরে “স্বাধীনতা সেতু” নির্মাণে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোনো সুবিধাজনক সময়ে কাজ শুরু করা হবে।’
উলিপুর উপজেলার ইউএনও আব্দুল কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেহেতু সেতুটি সরকারি টাকায় নির্মিত হচ্ছে না সে জন্য বিষয়টি নিয়ে কোন উদ্যোগ নিতে পারছি না। এটি সম্পূর্ণ স্থানীয় লোকজনদের বিষয়। সেতুটি নির্মাণে সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।’
উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবু-আলা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বর্ণমযী সরোবরে সেতু নির্মাণ বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। উলিপুরে অনেক সেতু আছে যেগুলো ভেঙে পড়ে আছে। সেতুর অভাবে অনেক এলাকার মানুষের যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। সে সব সেতু নির্মাণ ও সংস্কারে কোনো মাথা ব্যথা নেই। দরিদ্রতাকে সামনে রেখে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলে তা উন্নয়নের নামে শুধু বিলাসিতাই হবে।’
উলিপুর সচেতন মহল প্রতিনিধি এডভোকেট প্রদীপ কুমার রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা স্বর্ণময়ী সরোবরের ওপর সেতু নির্মাণ করতে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসবে না স্বর্ণময়ী সরোবরের সেতুটি। এটি নির্মিত হলে সরোবরটি ঐতিহ্য হারাবে। স্থানীয় পরিবেশ নষ্ট হবে।’
সেতু নির্মাণ থেকে বিরত না হলে উলিপুরবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে বলেও জানান তিনি।
উলিপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবিবা পলি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বর্ণময়ী সরোবরে সেতু তৈরি করা হলে এখানে আড্ডা বেড়ে যাবে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণময়ী সরোবরকে নিজ গুণে টিকে থাকতে দেওয়া উচিৎ।’
তার মতে, সরোবরের ওপর ‘স্বাধীরতা সেতু’ নামে সেতু নির্মিত হলে এক সময় ‘স্বর্ণময়ী সরোবর’ হারিয়ে যাবে।
Comments