জুলাইয়ে কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে ১৩৭ শতাংশ: এমজেএফ

করোনা মহামারির কারণে দেশে সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করায় কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে।

করোনা মহামারির কারণে দেশে সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করায় কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) তড়িৎ টেলিফোন জরিপে দেখা যায়, জুনের তুলনায় জুলাই মাসে কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার ১৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

জরিপ মতে, জুলাইয়ে ৬৯২ শিশু কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জুনে এই সংখ্যা ছিল ২৯২। অন্যদিকে কমে এসেছে পারিবারিক নির্যাতনের হার।

এছাড়াও, শিশু অপহরণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বলে জরিপে বলা হয়, ’৬৯ শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে। মোট ২,৯৭৯ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েশিশু ১৯৭৯ জন অর্থাৎ ৬৬ শতাংশ এবং ছেলেশিশু ১,০০০ জন বা ৩৪ শতাংশ।

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে বেশি সংখ্যক শিশু কাজে যোগ দেওয়ায় কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতনের হার বেড়েছে বলে সংস্থাটি মন্তব্য করেছে। মন্তব্যে আরও বলা হয়, অনেকদিন ধরে পুরো পরিবার বেকার থাকায় বহু পরিবার বেশি সংখ্যায় সন্তানদের কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, অর্থনৈতিক অচলাবস্থার কারণে মালিকরা অল্প টাকায় শিশু শ্রমিক রাখার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ‘এছাড়া দেশে স্কুল এখনো বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা শিশুদের দিয়ে আয় করানোর পক্ষে।’

পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুরা কেমন আছে তা জানার জন্য সংস্থাটি জুলাই মাসে ৫৩ জেলার ১১১টি সহযোগী সংগঠনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। কথা বলা হয়েছে মোট ৬৩ হাজার ৯৬৮ জন নারী ও শিশুর সঙ্গে। এর মধ্যে নারী ৪৪ হাজার ৮৭৫ জন ও শিশু ১৯ হাজার ৯৩ জন।

জুলাইতে নারী ও শিশু মিলিয়ে মোট নির্যাতিতের সংখ্যা ১১ হাজার ৪৭১ জন। জুন মাসে তা ছিল ১২ হাজার ৭৪০ জন। জুলাইয়ে নারী নির্যাতিতের সংখ্যা ৮৪৯২ জন। এর আগের মাসে তা ছিল ৯৮৪৪ জন।

শিশু নির্যাতনের সংখ্যা জুলাইতে বেড়ে হয়েছে ২৯৭৯ জন। জুনে এটি ছিল ২৮৯৬।

নতুন আক্রান্ত নারী ও শিশুর সংখ্যা মোট ৩৮৯৯ জন। এর মধ্যে নারী তিন হাজার ২৯৩ জন বা ৩৯ শতাংশ এবং শিশু ৬০৬ জন বা ২০ শতাংশ।

জরিপে আরও বলা হয়, ৮৩৮৯ জন নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৬ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে ১৯ জন নারীকে, হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে এবং খাবার ও সাহায্য আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৭ জন।

শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হলেও বাল্যবিয়ের হার আগের চেয়ে কমে গিয়ে হয়েছে ১৭৪। এছাড়াও, ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে শিশুরা।

পারিবারিক নির্যাতনের আওতায় মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সবচেয়ে বেশি চার হাজার নারী এবং অর্থনৈতিক নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন ২৭৭১ জন। শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এক হাজার ৫৪৬ জনের উপর। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২০০ নারী।

জুলাইয়ের উপাত্তের কথা উল্লেখ করে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে শিশুর প্রতি নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার এই হার খুব ভয়াবহ।’

তিনি সরকারকে অন্যসব জরুরি অবস্থার পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তার প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দিতে আহ্বান জানান।

এমজেএফ এর আগে গত এপ্রিল, মে, জুন মাসেও তাদের সহযোগী সংগঠনের সহায়তায় পারিবারিক ও অন্যান্য ধরণের সহিংসতা নিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে।

এমজেএফ এই তরিৎ জরিপটি করিয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতা ও অন্যান্য সহিংসতা প্রতিরোধ ও সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে।

সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে গেলেও অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি নারী ও শিশুর ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাদের সহিংসতা মুক্ত রাখার জন্য দ্রুত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে এমজেএফ।

যে হেল্প লাইনগুলো নারীদের সহিংসতা বন্ধে সহায়তা করে থাকে— যেমন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ১০৯ ও পুলিশের সহায়তা জন্য ৯৯৯— সেগুলোকে আরও কার্যকর রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে যেন সহিংসতার শিকার নারীরা ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সহায়তা পেয়ে যান।

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

7h ago