আবারও দলই চা-বাগান বন্ধের নোটিশ
দীর্ঘ ২২ দিন পর গতকাল বুধবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা-বাগান চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করা, বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না করা ও বাগান চালুর নোটিশে শ্রমিকদের দায়ী করা হলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। যে কারণে আজ থেকে আবারও বাগান বন্ধের নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, গতকাল থেকে পুনরায় বাগানের শ্রমিকদের কাজ শুরু করার কথা ছিল। সেটি না করে দেওয়া তারা আইন (বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, অদ্যবধি সংশোধিত, ১৩/১ ধারা) ভঙ্গ করে এজিএমসহ তিন জনকে মারধর ও বাগানে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। যে কারণে বাগানটি আবারও বন্ধ করা হলো। গত ২৮ জুলাই বন্ধের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, সেটাও একই কারণে দেওয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টায় কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। সে সময় দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করায়, গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে টানা চার ঘণ্টা এজিএম খালেদ খানকে অবরুদ্ধ করেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা-বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দলই চা-বাগানের গেট বন্ধ করে শতাধিক নারী শ্রমিক বাগান অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের পেছনে পুরুষ শ্রমিকরা অবস্থান নেন। গতকাল চা-বাগানটি চালু করার নোটিশ দেওয়া হলেও বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার না করে নোটিশের শুরুতেই ‘শ্রমিকদের বেআইনি আন্দোলনের ফলে বন্ধ’ হয় বলে উল্লেখ করায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন।
চা-বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক সেতু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সম্মুখে জড়ো হন। তারা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। তবে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ১০টায় কোম্পানির এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। সে সময়ে শ্রমিকরা আপত্তি জানালে নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম (৫৫) ও ফাতেমা বেগমকে (৫০) টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা-বাগানের এজিএম’র গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন ও এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।’
চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বেলা ১২টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু সরেজমিনে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। চা-শ্রমিকরা আজ থেকে কাজে যাওয়ার কথা। কিন্তু, চা-বাগান কর্তৃপক্ষ আজ আবারও চা-বাগান বন্ধের নোটিশ দিয়ে দিয়েছে।
চা-বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা মাদ্রাজী বলেন, ‘এজিএম বাগানে আমাদের নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। তাদের টেনেহিঁচড়ে গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলছে। এটি কোনোমতেই সভ্য আচরণ নয়।’
মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির নির্দেশনায় আন্দোলনরত চা-শ্রমিকদের বুঝিয়ে এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে নিরাপদে চা-বাগান ত্যাগের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে দলই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চা-শ্রমিকরা উল্টো আমাদের মারধর করেছে।’
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের বোঝানোর পর তারা পরিবেশ তৈরি করায় নিরাপদে এজিএম ও ব্যবস্থাপককে দলই চা-বাগান থেকে বের করে আনা গেছে। বাগান কোম্পানির পক্ষে জিপ গাড়ি ভাঙচুরের মৌখিক অভিযোগ ও নারী চা-শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ারও মৌখিক অভিযোগ থাকলেও এ পর্যন্ত থানায় কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি।’
Comments