নারায়ণগঞ্জে করোনা হাসপাতালে শয্যার অর্ধেক রোগী, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি

নারায়ণগঞ্জের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের তিনটি আইসোলেশন ইউনিটে মোট ৪০ জন রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এর একটি ইউনিটে রোগী, ডাক্তার বা নার্স কেউ নেই। ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য দুটি ইউনিটে রোগী আছে ২২ জন। এছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউতেও পাঁচটি শয্যা ফাঁকা।
কোভিড ডেডিকেটেড ৩০০ শয্যা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালের দৃশ্য। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের তিনটি আইসোলেশন ইউনিটে মোট ৪০ জন রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এর একটি ইউনিটে রোগী, ডাক্তার বা নার্স কেউ নেই। ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য দুটি ইউনিটে রোগী আছে ২২ জন। এছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউতেও পাঁচটি শয্যা ফাঁকা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে শহরের খানপুর এলাকায় ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে এ দৃশ্য। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের পরীক্ষার জন্য যে বুথ রাখা হয়েছে সেখানেও কোনো রোগীর দেখা নেই। চেয়ারে বসে অলস সময় পার করছেন দুই নমুনা সংগ্রহকারী। করোনা রোগীর চাপ না থাকলেও এই সময়ের মধ্যে অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য আসা বেশ কয়েকজনকে ফিরে যেতে দেখা যায়।

বন্দর থেকে ফয়সাল আহমেদ তার বৃদ্ধা মাকে হাসপাতালে এনেছিলেন। কিন্তু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হওয়ায় মায়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মায়ের পেটে দুইদিন ধরে ব্যথা তাই স্থানীয় ডাক্তার শহরে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এসে জানতে পারলাম এ হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না। এখন বেসরকারি চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা লাগবে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খানপুরে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন রোগী দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহকারী ফয়সাল আহমেদ রাতুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন রোগীর চাপ নেই। দিনে যে দুই একজন আসেন তারাও নমুনা দিয়ে চলে যান। আগের মতো ভীড় নেই। আক্রান্তও কমে এসেছে।’

নমুনা সংগ্রহকারী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. জাহাঙ্গীর মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন দিনে ৭০ থেকে ৮০ জন নমুনা দিতে আসেন। মাস দেড়েক আগেও ১২০ থেকে ১৩০ জন করে আসছিলেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কোভিড ডেডিকেটেড ২১ নম্বর ওয়ার্ডে (নারী) ভর্তি আছেন ১২ জন আর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে (পুরুষ) ১০ জন। আর আইসিইউতে রয়েছেন পাঁচ জন।

২১ নম্বর ওয়ার্ডের নার্স শাহানাজ আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিদিনই একজন দুইজন করে রোগী আসছে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির আগে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হতো। ভর্তি থাকতেন প্রায় দুই শতাধিক রোগী। করোনার সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই হাসপাতালটিকে কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষণা দেয়। ১২ এপ্রিল সীমিত পরিসরে চালু করা হয় হাসপাতালটির ফ্লু-কর্নার। যেখানে করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে হাসপাতালটিতে শুরু হয় করোনা রোগী ভর্তি কার্যক্রম। এর প্রায় তিন মাস পর ২ জুলাই আইসিইউ কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬৫৫ জন করোনা রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ছাড়পত্র নিয়ে গেছেন ৬৩০ জন। আইসিইউ পর্যন্ত গেছেন ৩৭ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭ জন।

নারায়ণগঞ্জের সামাজিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ এর সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এখন করোনার প্রকোপ নেই। আক্রান্তের হার অনেক কমে এসেছে। তাই আমরা চাই ৩০০ শয্যা হাসপাতাল যেন করোনার জন্য নির্ধারিত না রেখে সবার চিকিৎসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাসপাতালটির একটি অংশ করোনার জন্য রেখে বাকিটা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দ্রুত বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সেবা চালু করা হোক।’

৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাসপাতালে এখন রোগী কম। যারা ছিলেন তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। দিন দিন আক্রান্তও কমে আসছে। তাই আমরাও চাই জরুরি ও বহির্বিভাগ চালু করতে। তবে এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। আশা করছি অচিরেই সিদ্ধান্ত আসবে। যে সিদ্ধান্ত আসবে সেভাবেই আমরা কাজ করব।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago