না থেকেও আছেন নায়করাজ

নায়করাজ রাজ্জাক নেই তিন বছর হলো আজ। কোনো কোনো শিল্পী আছেন যারা কর্ম দিয়ে বেঁচে থাকেন যুগের পর যুগ। রাজ্জাক তেমনি একজন। বাংলাদেশের সিনেমা যতদিন থাকবে নায়করাজের নাম উচ্চারিত হবে, তার সিনেমা মানুষ দেখবে।
razzak
নায়করাজ রাজ্জাক।

নায়করাজ রাজ্জাক নেই তিন বছর হলো আজ। কোনো কোনো শিল্পী আছেন যারা কর্ম দিয়ে বেঁচে থাকেন যুগের পর যুগ। রাজ্জাক তেমনি একজন। বাংলাদেশের সিনেমা যতদিন থাকবে নায়করাজের নাম উচ্চারিত হবে, তার সিনেমা মানুষ দেখবে।

রাজ্জাক অভিনীত সুপারহিট সিনেমা ‘স্বরলিপি’। এই সিনেমার একটি বিখ্যাত গান— ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে….’। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানটি জনপ্রিয়। ‘স্বরলিপি’ ও এই সিনেমার গান মানুষের মাঝে থাকা মানেই রাজ্জাকের স্থায়ী আসন লাভ করা।

‘স্বরলিপি’তে রাজ্জাকের নায়িকা ছিলেন ববিতা।

রাজ্জাক অভিনীত ‘অবুঝ মন’ সিনেমাটির কথা বলতেই হয়। কাজী জহির পরিচালিত ও রাজ্জাক অভিনীত এ সিনেমার একটি গান— ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। এই গানটির বয়সও ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে এই সিনেমা ও এর গান। এগুলো রাজ্জাককে এনে দিয়েছে ঢাকাই সিনেমায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখানোর বিষয়টি।

‘অবুঝ মন’ সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন শাবানা।

প্রখর রোদে কিংবা বিষণ্ন বিকেলে এখনো পিচঢালা পথে অনেক তরুণ  গেয়ে উঠেন ‘পিচঢালা এই পথটারে আজ ভালোবেসেছি’। রাজ্জাক অভিনীত ‘নীল আকাশের নিচে’ সিনেমার এই গানটি ও এই সিনেমাটিও প্রজন্মের পর প্রজন্ম আগ্রহ নিয়ে দেখবে।

রাজ্জাক অভিনীত ‘ময়নামনি’ সিনেমাটিও রাজ্জাককে বাঁচিয়ে রাখবে অনেক বছর। প্রেম ও বিরহের এ সিনেমার কাহিনী ও গান ছুঁয়ে যায় নতুন প্রজন্মের মানুষদেরও। বিশেষ করে বিরহে পড়ে যে কেউ গেয়ে উঠেন, ‘প্রেমের নাম বেদনা’।

এই সিনেমার আরেকটি গান ‘অনেক সাধের ময়না আমার…’। এ গানটি গাওয়া মাত্রই যে কারো চোখে ভেসে উঠবে রাজ্জাকের নাম ও তার অভিনীত ‘ময়নামতি’ সিনেমাটি। এ সিনেমায় রাজ্জাকের নায়িকা ছিলেন কবরী।

‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’ রাজ্জাক অভিনীত আরও একটি সুন্দর সিনেমা। এই সিনেমার একটি রোমান্টিক গান তাকে তরুণ-তরুণীদের মনে গেঁথে রাখবে। গানটি হলো: ‘নীল নীল আহা কত নীল’। এ চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের নায়িকা ছিলেন কবিতা।

রাজ্জাক অভিনীত গানগুলো যেমন তাকে বাঁচিয়ে রাখবে, একইভাবে তার অভিনীত সিনেমার কাহিনী ও সংলাপও মানুষ মনে রাখবে। তার অভিনীত ভীষণ রোমান্টিক একটি গান— ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’। ‘নাচের পুতুল’ সিনেমার গান এটি। এ সিনেমায় রাজ্জাক জুটি বেঁধেছিলেন শবনম এর সঙ্গে।

‘চোখ যে মনের কথা বলে’ সব ধরণের মানুষের প্রিয় গান। এ গানটিও রাজ্জাক অভিনীত সিনেমার। সিনেমাটির নাম ‘যে আগুনে পুড়ি’। আজও গানটি শোনা যায় নানাজনের কণ্ঠে। এই সিনেমায় রাজ্জাকের নায়িকা ছিলেন সুচন্দা।

একটা সময় ছিল যখন রাজ্জাক অভিনীত ‘লাইলী মজনু’ সিনেমাটি মুক্তি পেল, সেই সময়ে যে কোনো যুবক দাঁড়ি রাখলেই তাকে বলা হতো— ওই যে মজনু যাচ্ছে। ভালোবাসার সিনেমা হিসেবে রাজ্জাক অভিনীত এ সিনেমাটিও তাকে বছরের পর বছর ধরে বাঁচিয়ে রাখবে তার মৃত্যুর পরও।

‘লাইলী মজনু’ সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন ববিতা।

‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ রাজ্জাকের ক্যারিয়ারের ব্যবসাসফল একটি সিনেমা। এ সিনেমায় শাবানা ছিলেন তার নায়িকা। এর একটি গান সেই সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি হলো: ‘গীতিময় এই দিন চিরদিন বুঝি আর হলো না’।

রাজ্জাক তার সময়ের সব নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। তবে, রাজ্জাক-কবরী জুটির নামটি বেশি উচ্চারিত হতো।

‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমা তো নয় যেন প্রতিবাদে জ্বলে উঠা এক বিদ্রোহী সত্তা। রাজ্জাক অভিনয় করেন এ সিনেমায়। পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী এই সিনেমা তাকে দিয়েছে ভিন্ন কিছু। এই সিনেমার আবেদন বাঙালির কাছে কখনো শেষ হবে না।

প্রায় ৪০ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল রাজ্জাক অভিনীত ‘ছুটির ঘণ্টা’। একটি বাচ্চাকে ঘিরে পাল্টে যায় সিনেমার কাহিনী। বাঙালি আবেগ পছন্দ করে। এই সিনেমায় তা ছিল। রাজ্জাক রোমান্টিক ঘরানা থেকে বের হয়ে নতুন করে একজন দপ্তরির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এ সিনেমটিও দর্শকদের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেকদিন।

‘আলোর মিছিল’-এ সবার সামনে হাজির হয়েছিলেন অন্য এক রাজ্জাক। ‘রংবাজ’ সিনেমায় তো পুরো রংবাজ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

রাজ্জাক ঢাকাই চলচ্চিত্রের এমন এক সফল নায়ক ছিলেন যার কথা বলে শেষ করা যাবে না। অনেক সংগ্রাম করে তিনি ক্যারিয়ার গড়েছিলেন। ছোট-ছোট চরিত্রে অভিনয় নিয়ে সফলতার চূড়ান্ত সিঁড়িতে উঠেছিলেন।

শুধু কি রোমান্টিক নায়ক ছিলেন রাজ্জাক? রোমান্টিক ঘরানা ছেড়ে সামাজিক, অ্যাকশন, ফোক সব ধরনের সিনেমায় দেখা যেত তাকে। তবে, সামাজিক ও রোমান্টিক সিনেমার নায়ক হিসেবে তার কাজ করা হয়েছিল বেশি সিনেমায়।

এ দেশের ঘরে ঘরে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে রাজ্জাক একটি প্রিয় নাম। তিন বছর হলো তিনি নেই। কিন্তু, তিনি তো আছেন! তার বহু সিনেমা জনপ্রিয়তার কারণে এখনো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখানো হয়। সে সব সিনেমার গান আজও প্রবীণ দর্শক থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের দর্শকরাও দেখেন।

এভাবেই রাজ্জাক তার সিনেমা দিয়ে দেহগতভাবে না থেকেও বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।

‘আবির্ভাব’ সিনেমায় রাজ্জাকের লিপে একটি গান ‘আমি নিজের মনে নিজেই যেন ধরা পড়েছি’। তিনি ধরা তো পড়বেনই। তার ধরা পড়াটা মূলত নায়ক হিসেবে। তিনি যে সবার প্রিয় নায়ক রাজ্জাক।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago