বিগত ২৫ দিন যাবৎ বন্ধ দলই চা-বাগান

‘খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছি’

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা-বাগান দীর্ঘ ২৫ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। বাগান বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই দুরবস্থা শুরু হয় সেখানকার শ্রমিকদের। এখন একমুঠো খাবার জোগাতেই হিমশিম অবস্থা তাদের।
খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন দলই চা-বাগানের শ্রমিকরা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা-বাগান দীর্ঘ ২৫ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। বাগান বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই দুরবস্থা শুরু হয় সেখানকার শ্রমিকদের। এখন একমুঠো খাবার জোগাতেই হিমশিম অবস্থা তাদের।

জীবন-যৌবন সবটাই চা-বাগানের জন্য ব্যয় করেছিলেন ৯০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত চা-শ্রমিক বিশখা কুর্মী। অথচ গত তিন সপ্তাহ যাবত বেশিরভাগ সময়ই তাকে উপোস কাটাতে হচ্ছে। যাও একবেলা খেতে পান, তাতেও পাতলা ডাল ছাড়া আর কিছুই জোটে না।

বিশখা কুর্মী বলেন, ‘এই বয়সে এমনিতেই খেতে পারি না। তিন বেলার খাওয়ার কথা, তাও খেতে পাচ্ছি না। বাড়ির ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকালে কষ্ট হয়। চিন্তুায় রাতে ঘুম আসে না। চাল ভাজা ও লবণ দিয়ে চা-পানি খেয়েই দিনাতিপাত করছি।’

চল্লিশ বছর বয়সী চা-শ্রমিক বাদল নায়েক বলেন, ‘আমিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ঘরে পাঁচ থেকে সাতটি খাবার মুখ আমার দিকে চেয়ে আছে। অবুঝ বাচ্চারা কোনো বুঝ মানছে না। মাও বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।’

বাগানটির শ্রমিকরা জানালেন, গত ২৭ জুলাই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাগানে কাজ করছিলেন। সন্ধ্যায় কোনো কারণ ছাড়াই কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এ খবর যখন তারা শুনে, তখন তাদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে। এখন একমুঠো খাবার জোগাতেই হিমশিম অবস্থা তাদের।

চা-শ্রমিক নেতা সাবের মিয়া বলেন, ‘একদিকে ২৫ দিন ধরে কাজ থেকে বঞ্চিত, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু-ঝুঁকিতে আছেন এই বাগানের শ্রমিকরা। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা না গেলে শত শত চা-শ্রমিকের জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি অতিদ্রুত বিষয়টির সমাধান না হয়, তাহলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

চা-শ্রমিক নমি কুর্মী বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় আমরাতো কারো দয়া চাইছি না। আমরা আমাদের হক দাবি করছি। যে সময়গুলোতে গরিব মানুষেদের উপকারে ধনীরা এসে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক সেই সময় আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা বাঁচলে সবাই একসঙ্গে বাঁচতে চাই।’

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগানটি ‘দলই টি কোম্পানি লিমিটেডের’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে মোট এক হাজার শ্রমিক আছেন। যার ভেতর ৫৫০ জন শ্রমিক স্থায়ী। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পান।

বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক সেতু রায় বলেন, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই দৈনিক কম মজুরি পান। এখন কাজও নেই, মজুরিও মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোস করে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।’

নোটিশের কথা উল্লেখ করে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট থেকে পুনরায় বাগানের শ্রমিকদের কাজ শুরু করার কথা ছিল। সেটি না করে তারা আইন (বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, অদ্যবধি সংশোধিত, ১৩/১ ধারা) ভঙ্গ করে এজিএমসহ তিন জনকে মারধর ও বাগানে উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। যে কারণে বাগানটি আবারও বন্ধ করা হলো। গত ২৮ জুলাই বন্ধের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, সেটাও একই কারণে দেওয়া হয়েছিল।’

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘দলই চা–বাগান কোম্পানির এজিএম ও ব্যবস্থাপককে অবরুদ্ধ করা, জিপ গাড়ির কাচ ভাঙচুর ও দুই নারী চা–শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। তবে, এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago