‘পদ্মাসেতুর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করবেন না’
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেছে যে তারা যেন বহুল-প্রত্যাশিত সেতুর নির্মাণ কাজের কোনো তথ্য, ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করেন।
আরও বলা হয়েছে, ‘কোনো বিপদজনক ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’সহ সেতু সংক্রান্ত কোনো আলোচনা ও ভাবনা-চিন্তা ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটঅ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া যাবে না।
তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহকর্মী ও অধস্তনরা ইমেইল, এসএমএস বা লিখিতভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানায়, গতকাল শনিবার পদ্মাসেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে বলেছেন, এই নির্দেশনা এমন সময় এলো যখন দেশে করোনা মহামারি ও পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১০ জুনের পর থেকে নতুন করে কোনো স্প্যান বসানো যায়নি। সে সময় সেতুর ৩১তম স্প্যান বসানো হয়।
গত ৩১ জুলাই পদ্মার ভাঙনে পড়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইয়ার্ড। এতে অন্তত ১৯২টি রেলওয়ে স্টিংগার ও সড়কপথের ২২০টি ডেক নদীতে ভেসে যায়।
সূত্র আরও জানায়, পদ্মার এই ভাঙনে মূল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে সেতু থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। এর ফলে কাজে ধীরগতি আসতে পারে। কেননা, এই রেলওয়ে স্টিংগ্রারগুলো লুক্সেমবার্গ থেকে আবার আনতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকল্প কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পদ্মাসেতুর কোনো তথ্য বা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার না করা সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। আমি মনে করি, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই এই চিঠি পেয়েছেন।’
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল এই নির্দেশনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রকল্পে ৫ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করেন। সবাইকে কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করার অনুমতি দিতে পারি?’
সেতু প্রকল্পের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করায় কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা?— ‘হ্যাঁ, এর ফলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে,’ যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রকল্প সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইউটিউবে ভিডিও পোস্টট করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের কর্মকর্তাদের বলেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (সেতু সংক্রান্ত) কোনো ছবি বা তথ্য শেয়ার না করতে।’
দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সৃষ্টিতে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজের ঘোষিত সময়সীমা ২০২১ সালের জুন।
কাজের সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি সেতু নির্মাণের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
করোনা মহামারির কারণে বর্তমান সময়সীমাও বাড়ানো হতে পারে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত জুন পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলেও তারা জানান।
প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মাসেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দেশের জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
Comments