কক্সবাজার

গরুচোর সন্দেহে রশিতে বেঁধে মা-মেয়েকে নির্যাতন

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে গরু চুরিকে কেন্দ্র করে তিন নারীসহ পাঁচ জনকে প্রকাশ্যে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এক মা ও তার মেয়েকে বর্বর কায়দায় হাত ও কোমরে রশি বেঁধে রাস্তায় শত শত লোকের সামনে হাঁটানো হয়েছে।
mob beating
প্রতীকী ছবি। স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে গরু চুরিকে কেন্দ্র করে তিন নারীসহ পাঁচ জনকে প্রকাশ্যে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এক মা ও তার মেয়েকে বর্বর কায়দায় হাত ও কোমরে রশি বেঁধে রাস্তায় শত শত লোকের সামনে হাঁটানো হয়েছে।

এ ছাড়াও, এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় গরু চুরির মামলা করা হয়েছে। পরে আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হারবাংয়ের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি গরু চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় লোকজন গত শুক্রবার বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে তিন নারীসহ পাঁচ জনকে আটক করে পিটিয়ে আহত করেন। আটক পাঁচ জনের মধ্যে এক মা ও তার মেয়েকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ আহমদ হোসেনের নেতৃত্বে কোমর ও হাতে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় শত শত মানুষের সামনে টানাটানি এবং হাঁটানো হয়। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিরানুল ইসলামের নির্দেশে তাদের পাঁচ জনকে বিকাল ৪টার দিকে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। সেখানে চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ আরেক দফা পেটায় তাদের। এরপর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিরানুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য সৈয়দ নুর তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে হারবাং ইউনিয়নের বৃন্দাবনখিল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় গরু চুরির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায় মামলাটি রুজু করেন চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান। দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের শিকার পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- মো. ছুট্টু, এমরান, পারভীন, সেলিনা আকতার শেলী ও রোজিনা আকতার। পুলিশ পাঁচ জনকে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে আটক করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতে নিয়ে আসা হয় থানায়। উক্ত মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শনিবার সকালে চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে সোর্পদ করা হয়। আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। 

বাদী মাহবুবুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অভিযুক্ত পাঁচ জন প্রথমে তার সন্তানকে মারধর করেন। সন্তানের চিৎকারে গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসে পাঁচ জনকে পিটুনি দেয় এবং রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে কয়েকশ লোক জড়ো হয়। সন্ধ্যার পর চেয়ারম্যান পুলিশের হাতে আসামিদের তুলে দেন। হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির একদল পুলিশ তাদের চকরিয়া থানায় নিয়ে যায়। রাতে আমি হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে চকরিয়া থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ আহমদ হোসেনের মোবাইলে অনেকবার কল করা হয়। চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোন বার বার বন্ধ পাওয়া যায়। আহমদ হোসেনের মোবাইলে সংযোগ পাওয়া গেলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে চেয়ারম্যান অজ্ঞাত স্থান থেকে এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন যে, তিনি এ ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত নন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকার প্রতিপক্ষ বিপদে ফেলার জন্য তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। 

চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গরু চুরির ঘটনা যেমন অপরাধ, তেমনি নারীর প্রতি সহিংসতা ও অমানবিকতা আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ। অতি উৎসাহী যারা নারীদের ওপর এমন গর্হিত কাজ করেছেন, তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশ ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে।’

ঘটনা তদন্তে আজ রোববার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও সরকারের উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে। অপর দুই সদস্য হলেন- চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন ও হারবাং ইউনিয়নের টেক অফিসার সঞ্জয় চক্রবর্তী।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়। তিনি বলেন, ‘কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল তাবরীজ, চকরিয়া সার্কেল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলাম ও চকরিয়া থানার ওসি হাবীবুর রহমান আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago