প্যারিসের কোমান বায়ার্নের নায়ক

ছবি: রয়টার্স

বায়ার্ন মিউনিখ তাদের মঞ্চটা সাজিয়ে ছিল রবার্ট লেভানদভস্কিকে ঘিরে। আর প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) সাজায় নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপেকে কেন্দ্র করে। ম্যাচের সব আলো ছিল তাদের ঘিরেই। কিন্তু তারকাদের ভিড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আগের দিন নায়ক অখ্যাত খেলোয়াড় কিংসলে কোমান। প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়াই যার জন্য ছিল বিস্ময়। অথচ এ তরুণের সবকিছুই ছিল প্যারিসকে ঘিরে।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা দুটোই প্যারিসে। ফুটবল খেলার হাতেখড়িও এখানে। স্থানীয় ক্লাব পিএসজির একাডেমীতেই খেলোয়াড় হিসেবে পরিণত হয়েছেন। প্রায় এক দশক সময় ধরে। ফলে ক্লাবটির প্রতি আলাদা মায়া গড়ে ওঠা ছিল খুব স্বাভাবিক। কোমানও খুব চেয়েছিলেন প্যারিসেই থাকতে। কিন্তু শৈশবের পছন্দের ক্লাবে টিকে থাকতে পারেননি তিনি। টাকার কুমির নাসের আল খেলাইফির নজর ছিল তারকাদের দিকে। তার মতো উঠতি তরুণের দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়?

আট বছর বয়সে প্যারিসের একাডেমীতে যোগ দিয়েছিলেন কোমান। ২০১৩ সালে পিএসজির বি দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি সুযোগ মিলে সিনিয়র দলে। সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কো ভেরাত্তির জায়গায় বদলি খেলোয়াড় হিসেবে যখন মাঠে নামেন, তখন ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় তিনি। দারুণ সম্ভাবনাময় এ খেলোয়াড়ের মধ্যে তখন অনেকেই ভবিষ্যৎ বড় তারকাকে দেখছিলেন।

কিন্তু কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট (কিউএসআই) ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সব বদলে যেতে শুরু করে। কাড়িকাড়ি টাকা ঢেলে প্রতিষ্ঠিত বড় তারকাদের দলে টানায় নজর দেয় দলটি। পরের বছরের গ্রীষ্মে তাই প্রিয় ক্লাব ছেড়ে যোগ দেন জুভেন্টাসে। এক বছর যেতেই সে ক্লাবটি তাকে ধারে পাঠায় বায়ার্নে। ক্লাবের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় পরের বছর পাকাপাকিভাবে কিনে নেয় জার্মান ক্লাবটি। তখন থেকেই পুরোদুস্তর বায়ার্নের খেলোয়াড় কোমান।

অথচ বাধ্য হয়েই প্যারিস ছাড়তে হয়েছিল কোমানকে। যখন ক্লাব ছাড়েন তখন চোখের জল লুকাতে পারেননি। কিন্তু ভাগ্যদেবী কাল যেন সেই প্যারিসের ক্লাবটিকে যেন উপহাস করে। এবার সেই কোমানের গোলে চোখে জল নিয়ে মাঠ ছাড়ে নেইমার-এমবাপেরা। তার দেওয়া গোলটিই হয় ম্যাচ নির্ধারক। ম্যাচসেরাও তিনি। তখন একটুও কি আঘাত লাগেনি পিএসজি মালিকের?  

নেইমার যখন কাঁদছিলেন তখন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন খেলাইফি। হয়তো দুই এক বিন্দু অশ্রু বিসর্জনও দিয়েছেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেনও হতাশার কথা। তখন কি কোমান হেসেছিলেন? আসলে বায়ার্নের হয়ে গোল করতে পেরে উচ্ছ্বসিত হলেও পিএসজির হারে অস্বস্তি বোধ করেছেন তিনি। ম্যাচ শেষে আরএসিওয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'এটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। অনেক বেশি আনন্দের। আমি শতভাগ বায়ার্নের। তবে পিএসজির জন্য কিছুটা খারাপ লাগছে।'

আর এমনটা হওয়াই যে স্বাভাবিক ছিল তার। শৈশবে প্রিয় পিএসজির জয়ে উল্লাসে মেতেছেন, কেঁদে ভাসিয়েছেন তাদের হারে। তার বাবা অনেকবারই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পিএসজির প্রতিটা হারেই কেঁদে ভাসাতেন কোমান। এ ক্লাবটি ছেড়ে কখনই কোথাও যেতে চাননি তিনি। কিন্তু ভাগ্য সবসময় সবকিছু দেয় না। ভাগ্যদেবী হয়তো বায়ার্নের তার সেরাটা লিখে রেখেছিলেন। ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তিটাই পেয়ে গেলেন কাল।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago