হাতিয়ায় বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪ কোটি টাকার মাছ

মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও বন্যার পানিতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বিপ, সুখচর, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, জাহাজমারা, চরকিং, হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মৎস্য চাষির পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে। এতে ৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে উপজেলা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর মনে করছে। কিন্তু, চাষিদের দাবি এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।
১৭ আগস্ট রাত থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ার এসে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়। এতে ৫ হাজার পুকুর ও মাছের খামারের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। ছবি: সংগৃহীত

মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও বন্যার পানিতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বিপ, সুখচর, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, জাহাজমারা, চরকিং, হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মৎস্য চাষির পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে। এতে ৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে উপজেলা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর মনে করছে। কিন্তু, চাষিদের দাবি এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা তিন ভাই শামিম, কামাল ও বাবুল। এনজিও ও মহাজন থেকে ঋণ নিয়ে একটি মৎস্য প্রজেক্ট গড়ে তোলেন। এ খামারের আওতায় দশটি পুকুরে মাছ চাষ করেন তারা। মাছ চাষে বিনিয়োগ করেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু, মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও বন্যার পানিতে তাদের স্বপ্ন ভেসে গেছে। গত ১৬ আগস্ট রাতে স্বাভাবিকের ছেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে মৎস্য খামারের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে তারা ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এভাবে হাতিয়া সুখচর, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, জাহাজমারা, চরকিং, হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মৎস্য চাষির পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে।

৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে উপজেলা মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তর মনে করছে। কিন্তু, চাষিদের দাবি এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট বিকেলে জোয়ারের পানিতে হাতিয়ার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করলেও স্থানীয়রা তা স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু ১৭ আগস্ট রাত থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ার এসে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়। এতে ৫ হাজার পুকুর ও মাছের খামারের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। এ ছাড়াও, জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরের নিম্নচাপ, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা ও অমাবস্যার টানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ারে হাতিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সব জায়গা প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২ হাজার পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। শত শত মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত ও লোকসানের সম্মুখীন হন।’

‘বন্যায় কমপক্ষে ৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলায় পাঠানো হবে,’ যোগ করেন তিনি।

নিঝুম দ্বিপ, সুখচর, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, জাহাজমারা, চরকিং, হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মৎস্য চাষির পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সাইন্স (ক্রীড়া বিজ্ঞান) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জুয়েল বলেন, ‘আমি লকডাউনের মধ্যে গত মার্চ মাসে বাড়িতে আসি। করোনা পরিস্থিতিতে সময়ে দীর্ঘ ছুটিতে পড়ে এলাকার এক প্রবাসীর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৭০ শতক জমিতে মাছ চাষ করি। গত ৪ মাসে খামারে প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ হয়েছে। হঠাৎ জোয়ারের পানি এসে সব মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখন ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

উপজেলা সুখচর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, সোনাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, চর ঈশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাশেদ উদ্দিন জানান, তাদের ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন হাজার খামার ও পুকুরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এতে শত শত মাছ চাষি পথে বসেছেন।

নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোতালেব হোসেন বলেন, ‘গত ৭ দিনের টানা বর্ষণ ও অতি জোয়ারের পানিতে হাতিয়ার মাছ চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক খামারি ও চাষি ঋণ করে মাছ চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলায় পাঠানোর জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago