করোনায় বরাদ্দ বন্ধ

কঠিন সময় পার করছেন লালমনিরহাটের ধরলা ও তিস্তা পাড়ের দুস্থরা

লালমনিরহাট সদর উপজেলা ধরলা নদীপাড়ের বনগ্রাম এলাকায় বসবাস করেন সোফিয়া বেওয়া। তার বয়স এখন ৬২ বছর। ভিক্ষাবৃত্তি করেই তার জীবন চলে। করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় পাচ্ছে না সরকারি সহায়তা। স্থানীয় বাসিন্দারাও ভিক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
Lalmonirhat_Dhorola_Tista_2.jpg
করোনার কঠিন সময় পার করছেন লালমনিরহাটের ধরলা ও তিস্তা পাড়ের দুস্থরা। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলা ধরলা নদীপাড়ের বনগ্রাম এলাকায় বসবাস করেন সোফিয়া বেওয়া। তার বয়স এখন ৬২ বছর। ভিক্ষাবৃত্তি করেই তার জীবন চলে। করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় পাচ্ছে না সরকারি সহায়তা। স্থানীয় বাসিন্দারাও ভিক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে তিনি এক পোয়া চাল পেয়েছেন। ভাতের সঙ্গে কাঁঠালের কয়েকটি বিচি সেদ্ধ দিয়েছেন ভর্তা করে খাবেন বলে। সোফিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, করোনা পরিস্থিতির আগে এক দিনে দুই থেকে আড়াই কেজি চাল পেতেন। নগদ ৪০ থেকে ৫০ টাকা সহায়তা পেতেন। এখন আট থেকে ১০ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। অনেক বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে গেলে বাড়ির বাসিন্দারা রাগ করেন।

তিনি বলেন, ‘করুনা কোন দিন ভাইগবে বাহে? করুনাতো হামাকগুলাক নাজেহাল করি ছাইরবার নাগছে। হামাকগুলাক না থ্যায় থুবার নাগছে। হামাকতো করুনা ধরে না। করুনা যদিল হামাক মারি ফ্যালাইল হয়, সেটাই হামার জন্যে ভালো হইল হয়। কিন্তু হামাক খালি ভাতের কষ্ট দিবার নাগছে।’

সদর উপজেলার কুলাগাট ইউনিয়নের ধরলা পাড়ের শিবেরকুটি এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ কারেন রইচ আলী। তার বয়স এখন ৭৪ বছর। তিনি বলেন, ‘হামারতো আর বেচার কিছু নাই যে সেইল্যা ব্যাচে হামরা খাবার কিনি খামো। হামার হাতো টাকা নাই, পায়সা নাই। অ্যালা কী করি প্যাটোত গামছা বান্ধি থাকি। কোট যাই, কাই হামাক খাবার দিবে। করুনা হামাকগুলাক ধরে নাই কিন্তু হামাকগুলাক ভাতে মাইরবার নাগছে।’

আদিতমারী উপহেলার তিস্তা পাড়ের গোবর্ধান এলাকার দিনমজুর মনছের আলী (৫৮) বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে কাজ নেই বললেই চলে। অধিকাংশ দিন দুই বেলা ভাত জুটছে না। ভবিষ্যতের অবলম্বন হিসেবে বাড়ির সামনে লাগানো দুটি মেহগনি গাছ সাড়ে ১৫ হাজার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। দুটি ছাগল ছিল, তাও সাড়ে সাত হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই টাকাও শেষের পথে।

লালমনিরহাট শহরের শহীদ মাহজাহান কলোনির রিকশাচালক মফিজুল ইসলাম বলেন, করোনা এসে ব্যয় বেড়ে গেছে। মাস্ক কিনতে হচ্ছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে হচ্ছে। বিত্তশালীদের চলে যাচ্ছে, গরিবরা আরও বেশি গরিব হয়ে যাচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের ভ্যানচালক রশিদুল ইসলাম বলেন, শুরুতে সরকারিভাবে ১০ কেজি করে চাল ও আড়াই হাজার টাকা সরকারি সহায়তা পেয়েছি, সেটা সবাই পায়নি। এখন আর কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) মশিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই মুহূর্তে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। প্রথম দিকে সরকারি অনেক ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English
Gaibandha by-election

National polls: EC orders withdrawal of two police commissioners

The Election Commission (EC) has ordered to withdraw commissioners of two metropolitan units of police, one deputy commissioner, and five superintendents of police.

42m ago