মেসির প্রস্থানে বাধা কী কী?
লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিল তার চুক্তি নবায়ন করতে না চাওয়ার খবর স্প্যানিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর। সেটা গেল মাসের ঘটনা। সপ্তাহ দুয়েক আগে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে কাতালানদের বিব্রতকর হারের পর তা জোরালো হয়। তবে জল্পনা-কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল সবকিছু। অবশেষে আর্জেন্টাইন তারকা নিজেই ফাটালেন বোমা!
বুরোফ্যাক্সের (প্রত্যয়িত পত্র) মাধ্যমে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন মেসি। মঙ্গলবার আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসে এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে গোটা ফুটবল দুনিয়া।
বার্সেলোনার সঙ্গে ৩৩ বছর বয়সী তারকার সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না অনেক দিন ধরেই। মাঠে দলটির হতশ্রী দশার সঙ্গে মাঠের বাইরের অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনাও তার মনকে বিষিয়ে দিয়েছে। আর তাই বার্সার সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে চাইছেন তিনি।
গেল কয়েক মাসে বার্সেলোনার কর্তাদের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু সংবাদে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন মেসি। যেমন, গেল জানুয়ারিতে সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করাসহ ক্লাবটির আরও অনেক সিদ্ধান্তের পেছনে তিনি কলকাঠি নেড়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- চুক্তির ধারা নিয়ে আদালতে মুখোমুখি মেসি-বার্সা?
কাতালানদের বর্তমান স্কোয়াডের মানের ঘাটতি নিয়েও মেসি খুবই হতাশ। গেল ফেব্রুয়ারিতে স্প্যানিশ গণমাধ্যম মুন্দো দেপোর্তিভোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এবারের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো নয় বার্সার স্কোয়াড।
এরপর এপ্রিলে বার্সেলোনার ফুটবলাররা করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দলের আর্থিক ঘাটতি পূরণে সহায়তা করতে বেতন-ভাতা কম নিতে রাজি হননি বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তার জন্যও বোর্ডকে দায়ী করে সরব হয়েছিলেন রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফরোয়ার্ড।
সবকিছু মিলিয়েই কঠোর সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেছেন মেসি। বার্সার হয়ে খেলা আর চালিয়ে যেতে চান না তিনি। তবে তার প্রস্থানের ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু বাধা। বার্সার সঙ্গে তার চুক্তিতে বিশেষ শর্তের কার্যকারিতা, রিলিজ ক্লজ ও বেতন- এই তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছে স্প্যানিশ গণমাধ্যম এএস।
আরও পড়ুন- দল ছাড়তে চাওয়ার কথা বার্সেলোনাকে জানিয়ে দিলেন মেসি!
বিশেষ শর্ত:
বার্সেলোনার সঙ্গে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই চুক্তিতে জুড়ে দেওয়া আছে বিশেষ একটি শর্ত- চাইলেই প্রতি মৌসুমের শেষে বিনামূল্যে ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে পারবেন তিনি। তবে শর্ত কার্যকর করতে হলে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে রেকর্ড ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে।
বার্সা বোর্ড অবশ্য দাবি করেছে, চুক্তির ওই শর্ত অনুসারে গেল ১০ জুনের মধ্যে মেসিকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাতে হতো। তখন বিনামূল্যে তাকে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ দেওয়া হতো। কিন্তু আরও অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে সেই সময়। তাই চুক্তির ওই ধারা এখন আর কার্যকর হবে না।
তবে মেসি ও তার আইনজীবীরা মনে করছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ২০১৯-২০ মৌসুম স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘায়িত হয়েছে। তাই বিশেষ শর্তটি মেয়াদও বাড়বে। অর্থাৎ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা কার্যকর করা যাবে। আর মেসি যেহেতু এই সময়ের আগেই তার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন, সেহেতু বার্সা ছাড়তে তার কোনো বাধা নেই।
আরও পড়ুন- গার্দিওলার সঙ্গে আলোচনা করেই মেসির বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত!
রিলিজ ক্লজ:
মেসির রিলিজ ক্লজ ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ইউরো। অর্থাৎ বার্সেলোনার ইচ্ছার বাইরে কোনো ক্লাব তাকে দলে নিতে চাইলে এই পরিমাণ অর্থ কাতালান দলটিকে দিতে হবে তাদের। কিন্তু বর্তমান চুক্তির মেয়াদের আর মাত্র এক বছর বাকি থাকায়, আগামী ২০২১ সালের জুনের পর তাকে বিনামূল্যে নিতে পারবে যেকোনো ক্লাব। তাই ক্যারিয়ারের শেষদিকে পৌঁছে যাওয়া মেসির পেছনে বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ কেউ করবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের তকমা রয়েছে মেসির সাবেক ক্লাব সতীর্থ নেইমারের গায়ে। ২০১৭ সালে ২২২ মিলিয়ন (২২ কোটি ২০ লাখ) ইউরোর বিনিময়ে বার্সা থেকে তাকে কিনে নিয়েছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। অর্থাৎ মেসিকে পেতে হলে এই মুহূর্তে ওই ট্রান্সফার ফি’র চেয়ে তিনগুণেরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে আগ্রহী ক্লাবকে।
বেতন:
তর্কসাপেক্ষে যাকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার, তার বেতন যে আকাশছোঁয়া হবে, তা আর আলাদা করে না বললেও চলে! তাই খুব কম ক্লাবেরই সামর্থ্য আছে মেসিকে দলভুক্ত করার।
কয়েক মাস আগে ফরাসি গণমাধ্যম লে’কিপ তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বার্সার কাছ থেকে বছরে প্রায় দশ কোটি (নয় কোটি ৯৬ লাখ) ইউরো বেতন নেন মেসি এবং বেতনের দিক থেকে বর্তমানে সর্বোচ্চ আয় করা ফুটবলার তিনি।
Comments