গবেষণার সময়কাল মার্চ-মে

৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে: আইসিডিডিআর,বি

কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রাথমিক পর্যায়ে গত মার্চ থেকে মে মাসে সরকারের ঘরে থাকার নির্দেশে দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
ফাইল ফটো স্টার

কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রাথমিক পর্যায়ে গত মার্চ থেকে মে মাসে সরকারের ঘরে থাকার নির্দেশে দেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

বিশেষত নারীরা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআর,বি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট, অস্ট্রেলিয়ার যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশের মতোই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।

মার্চের শেষ দিক থেকে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাসের ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে দেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে এবং নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল ২৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনো এক বেলা না খেয়ে ছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে গবেষণায়। নারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গেছে।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নারীদের মধ্যে যারা পরিবারে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন, তাদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

গবেষণার প্রধান গবেষক এবং আইসিডিডিআর,বি এর মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ইমিরেটাস বিজ্ঞানী ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ নারীদের এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব দেখা। এই গবেষণার ফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য দরিদ্র ও নারী-বান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে খাদ্য সংস্থানের জন্য তারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। এই গবেষণা অতিমারীর ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।’

লকডাউনের প্রভাব নিয়ে ওয়াল্টার এলিজা হল ইন্সটিটিউট-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শান্ত রায়ান পারিচা বলেন, লকডাউনের আগে এবং লকডাউন থাকা অবস্থায় পরিবারগুলো কীভাবে চলছিল- তা তুলনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি তারা লকডাউনের সময় অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে বিশেষ চাপের মধ্যে ছিলেন।’

গবেষণার অর্থায়ন করেছে ‘অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল’ এবং এটি ‘দোহার্টি ইন্সটিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া’র অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Matia Chowdhury no more

Awami League presidium member and former minister Matia Chowdhury breathed her last around 1:00pm

12m ago