ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত চিন্তার ফসল। আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত চিন্তার ফসল। আজ ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই ছয় দফা দাবি নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু, আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি এটা (ছয় দফা দাবি) বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময় (ছয়দফা দাবি সম্পর্কে) তার চিন্তা ভাবনার কথা লিখে রাখতেন এবং এগুলোও তিনি তার সহকারী (মোহম্মদ) হানিফকে টাইপ করে রাখতে বলেন। একমাত্র হানিফই জানতেন যে, ছয় দফা আর কারো নয়, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তাধারার ফসল। আর কেউ এটা জানত না।’

ছয়দফা দাবির পটভূমির উপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পূর্ব বাংলা বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিরাপত্তার কোনই গুরুত্ব ছিল না, তাই ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় এ অঞ্চলের জনগণ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাক-ভারত যুদ্ধের সময় আমরা সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিলাম। সে কারণেই, বঙ্গবন্ধু দূরদর্শিতার সঙ্গে ছয় দফা দাবি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন।’

সবক্ষেত্রে বিশেষত বেসামরিক ও সামরিক চাকরিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্বের বড় অংশই বাংলাদেশ থেকে আসত। কিন্তু, এর সিংহভাগই পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা হতো। বঙ্গবন্ধু এই বিরাট বৈষম্যে ও শোষণ-বঞ্চনার ইস্যুটি তুলে ধরেন এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান। আর তার সংগ্রামের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোর সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাকে তা করতে বাধা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং বিমানবন্দরেই সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষেপে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। ছয় দফা দাবিতে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ও দলের জাতীয় সম্মেলনে ছয় দফা গৃহীত হয়েছিল। পরে দেশব্যাপী ছয় দফা দাবি প্রচারের পদক্ষেপ নেন এবং একের পর এক জনসভা করতে থাকেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেখানেই ছয় দফার পক্ষে সভা করতে যেতেন সেখানেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হত। বারবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রতিটি জেলায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগরে ছয় দফা দাবির উপর সর্বশেষ সভা করে ঢাকায় ফিরে আসার পরই পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডীর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে জনগণ দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বগত বক্তব্য রাখেন। ড. রফিকুল ইসলাম এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চেক ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন।

সারাদেশের ৩৫টি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ১০০ জন বিজয়ীসহ প্রতিযোগীরা সংযুক্ত ছিল। এই প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৯ হাজার ৯২৯ প্রতিযোগী অংশ নেয়। অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ পাশা ও খুলনা রেলওয়ে গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা খুকু রানী প্রতিযোগীদের পক্ষ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

এ সময় ‘মুজিব বর্ষের’ থিম সং এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা দাবির উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন যা বাঙালির সামনে তাদের স্বাধীনতার দাবি হিসাবে হাজির হয়েছিল এবং তারা এটিকে বেঁচে থাকার অধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এটি পৃথিবীতে একটি বিরল উদাহরণ যে জনগণ এইভাবে একটি দাবিকে (ছয় দফা দাবি) গ্রহণ করেছিল এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছিল। এটি কেবল বাঙালির পক্ষেই সম্ভব। পাকিস্তানি শাসকদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে ছয়দফা দাবি পর্যায়ক্রমে এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এবং ৩৪ জন অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের সাজানো ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ শীর্ষক মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের জনগণ এই মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এবং এটিকে গণজাগরণে রূপান্তরিত করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি গণআন্দোলনের মুখে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ছয়দফা দাবি ঘোষণার কারণে বঙ্গবন্ধু এবং অন্য শীর্ষস্থানীয় আ. লীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর তার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এই দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখেন। আমার মা সবসময় জানতেন যে আমার বাবা কী চান এবং সে সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন থাকতেন।’

তিনি বলেন, ‘কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মা (ফজিলাতুন্নেছা) বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যেসব নির্দেশনা পেতেন তা দলীয় নেতা-কর্মী ও ছাত্র সমাজের কাছে পৌঁছে দিতেন।’

বঙ্গবন্ধু যখন উর্দুর পরিবর্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলেন যা শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে চালিত করে তখন তার গ্রেপ্তারের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের অগ্রাযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদেরকে জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি, যারা দেশের বিজয় নস্যাৎ করতে চেয়েছিল তারা আর এ সুযোগ পাবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago