বন্যায় হাতিয়ায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট

নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির পাকা আউশ ও রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।
Hatiya Harvest Damege.jpg
স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬-৭ ফুট উঁচু জোয়ারে হাতিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ছবি: স্টার

নোয়াখালী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির পাকা আউশ ও রোপা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।

আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও বন্যার পানিতে এ ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষিনির্ভর হাতিয়া উপজেলার শত শত পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, সাগরে নিম্নচাপ, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা ও অমাবস্যার টানে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬-৭ ফুট উঁচু জোয়ারে হাতিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এতে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হওয়া ফসলের মধ্যে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমির পাকা আউশ, ৭০০ হেক্টর রোপা আমন ও ১৪৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা।’

হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নের পণ্ডিত গ্রামের কৃষক মেহেরাজ উদ্দিন জানান, এনজিও ব্র্যাক থেকে তিনি দুই লাখ টাকার ঋণ নিয়ে তিন একর জমিতে আউশ ধান ও এক একর জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলেন।

তিনি ২২০ থেকে ২৩০ মন ধান ঘরে তোলার আশা করেছিলেন। এতে তার পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণের পর, ধান বিক্রি করে ব্র্যাকের ঋণ পরিশোধ করা যেত বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত অমাবস্যার প্রভাবে টানা বর্ষণ ও সাগরের লঘুচাপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ফুট উঁচু জোয়ার এসে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে গ্রামে। পানিতে মাঠের সব ধান তলিয়ে গিয়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।’ 

এখন পানি কমে গেলেও, দ্বিতীয় দফায় জমি চাষ করার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য তার নেই বলে জানান তিনি।

পরিবার নিয়ে পুরো বছর কী খাবেন এবং এনজিও’র ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন এই দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

শুধু মেহেরাজ উদ্দিনই নন, হাতিয়া উপজেলার সুখচর, নলচিরা, নিঝুম দ্বীপ, চর কিং, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া, তমরুদ্দি, চানন্দি ও হরনি ইউনিয়নের শত শত কৃষকের মাঠের সোনালী ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ‘নিঝুম দ্বীপে বেড়ি বাঁধ নেই। বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর জোয়ারের পানি এসে এখানে ফসল ডুবে যায়। আবার ভাটায় পানি চলে যায়। এতে আউশ ধান ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়। কিন্তু, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ফুট জোয়ার ও টানা বর্ষণে মাঠের পাকা আউশ ধান ও রোপা আমন এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকায় পচে নষ্টে হয়ে গেছে।’

একই বক্তব্য কৃষক কামাল উদ্দিনের। এ বছর আর জমির ধান পাওয়ার কোন আশা নেই বলে জানান তিনি।

সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের আবদুল হক মাঝি দেড় একর জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলেন। জোয়ার ও বন্যার পানিতে সেই ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘একদিকে দীর্ঘ সময় ধরে করোনার কারণে আয় রোজগারের পথ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে বন্যার পানিতে ফসল ডুবে যাওয়ায় এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।’

কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, হাতিয়া উপজেলায় চলতি বছর ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়। এর উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির আউশ ধান জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে।

তবে, বন্যা পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘পানি পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেওয়া যাচ্ছে না। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

Now