নেদারল্যান্ডসের সৈকতের আদলে হবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প

শনিবার সন্ধ্যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। ছবি: সোহরাব হোসেন

বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত ভাঙনের কবল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় সরকার নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে। এজন্য সে দেশে সমুদ্র সৈকত রক্ষায় যেসব প্রযুক্তি ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে কুয়াকাটাতেও একই প্রযুক্তি ও উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই বছর আগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম নেদারল্যান্ডস সফর করেছেন। 

গতকাল সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, নেদারল্যান্ড তাদের সৈকতগুলোর তীর রক্ষা করে যেভাবে সৈকত তৈরি করেছে সেই প্রক্রিয়া দেখে এসেছেন ওই টিম। বাংলাদেশে ফিরে সে অনুযায়ী সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন ডিপিপি প্রণয়ন হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে সেখান থেকে একনেকে যাবে।

কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ এ দুটি সৈকত আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে দেশের সম্মান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বিদেশিদের আগমন ও রাজস্ব আয় বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্র তীর রক্ষায় কুয়াকাটায় কিছু জিও টিউব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জিও টিউবগুলোতে দর্শনার্থীরা এসে বসেন এবং কেটে ফেলেন। যতদিন জিও টিউবগুলো ঠিক ছিল, ততদিন তীর ভাঙেনি কিন্তু ছিদ্র হয়ে টিউবের ভেতরের বালু সরে যাওয়ার পর থেকে তীরে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। সাধারণ জনগণেরও কিন্তু একটা দায়িত্ব আছে, শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করলেই হবে না।’

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের ২৭০ মিটার তীরভূমি রক্ষার জন্য জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাঙন রোধে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আপাতত ৩,২০০টি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। সামনের সপ্তাহেই এ কাজ শুরু হবে।’

চলতি বছরের ২০ আগস্ট থেকে বঙ্গোপসাগরের প্রবল স্রোত ও স্ফীত জোয়ারের অস্বাভাবিক ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অনেক এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কটির কমপক্ষে ২৫ ফুট সাগরে বিলীন হয়ে যায়। পাশাপাশি  ওই সড়কের পার্শ্ববর্তী মসজিদ, মন্দির, টুরিস্ট পুলিশের ছাউনি, পৌরসভার পাবলিক টয়লেট, পর্যটন পার্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও, সৈকতের অনেক প্রজাতির গাছপালা, বনবিভাগের জাতীয় উদ্যানের অসংখ্য ঝাউগাছ উপড়ে যায়।

ভাঙনের তীব্রতায় সৈকতের জিরো পয়েন্টের বালুর নিচে থাকা সাবমেরিন কেবল লাইন বের হয়ে পুনরায় হুমকির মুখে পড়ে যায় সাবমেরিন কেবলের ইন্টারনেট সেবা।

এ ভাঙনের ফলে হুমকির মধ্যে থাকা দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ সাগর পাড়ের ভাঙন স্থায়ীভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা না হলে এ ভাঙ্গন ক্রমাগত বিস্তার লাভ করবে। এতে সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেমের বিচ ম্যানহোলটি হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ২৪ মার্চ চিঠি দেয় সাবমেরিন কেবল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, গত ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ কুয়াকাটায় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে সৈকত রক্ষা কাজ শুরু হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
shutdown at Jagannath University

Students, teachers call for JnU 'shutdown'

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

3h ago