আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীর ‘সন্ন্যাসীর জীবন’ ও অনাবশ্যক বিতর্ক

বাংলাদেশের অনেক মানুষ পৃথিবীর বহু দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, বাংলাদেশের খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে যে, উন্নত বিশ্বের কোনো দেশ আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। ড. বিজন কুমার শীল তেমনই একজন মানুষ। সিঙ্গাপুর সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। ফলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশের অনেক মানুষ পৃথিবীর বহু দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু, বাংলাদেশের খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটেছে যে, উন্নত বিশ্বের কোনো দেশ আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। ড. বিজন কুমার শীল তেমনই একজন মানুষ। সিঙ্গাপুর সরকার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। ফলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।

২০১৯ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে আসেন তখন তার সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টে বাংলাদেশের ‘এমপ্লয়মেন্ট ভিসা’ ছিল। যার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত। পুনরায় ভিসার জন্যে আবেদন করলে তাকে এক বছরের ভিসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এই ভিসায় তার কাজের অনুমতি নেই। তার আগেই গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার ওয়ার্ক পারমিটের জন্যে আবেদন করা হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গত কয়েকদিন কিছু গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে এভাবে যে, ‘ড. বিজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। তার এমপ্লয়মেন্ট ভিসা নেই। গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

বিষয়টির সত্যতা জানার জন্যে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানুর সঙ্গে। গত সোমবার তিনি টেলিফোনে বলেন, ‘ড. বিজনকে আমাদের প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রয়োজন। তার মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গবেষণা করছেন। এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। তার ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করা হয়েছে। আমাদের কাছে আরও চারটি কাগজ চাওয়া হয়েছিল। তা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এখন সেভাবে চলছে না। তিনি ল্যাবে গবেষণা করছেন। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে তার ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাব।’

একটি গণমাধ্যমকে আপনি বলেছেন ড. বিজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে?

‘আমি গত প্রায় পাঁচ মাস দেশে ছিলাম না। কানাডায় গিয়ে আটকা পড়েছিলাম। গত কয়েক মাসের ঘটনার অনেক কিছু জানতাম না। সেই সাংবাদিকের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যা আমার বক্তব্যের প্রতিফলন নয়। ড. বিজনকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ড. বিজনের কাজের অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকার মধ্যেই কিছু গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, ড. বিজন কুমার শীলকে গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। এই তথ্য বিভ্রান্তিকর ও অসম্মানজনক।’

নাটোরের বনপাড়ায় এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ড. বিজন কুমার শীল ২০০২ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক। কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করে আছেন বাংলাদেশ।

ড. বিজন কুমার শীল বলছিলেন, ‘এ দেশের সাধারণ কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। মানুষ হিসেবেও আমি অতি সাধারণ। নিজেকে পণ্ডিত মনে করি না। যেহেতু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছি, আমার সৌভাগ্য যে পৃথিবীর বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বিশ্বের অনেক দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে আমি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছি। সেখানে কাজ করেছি। কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, আমি বাংলাদেশকে ভুলে গেছি কিংবা বাংলাদেশ আমার জন্মস্থান নয়। কারা কী উদ্দেশ্যে এই বিতর্ক তৈরি করছেন, আমি ঠিক জানি না।’

সিঙ্গাপুরে কাজ করাকালীনই ড. বিজন কুমার শীল আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন। যদিও আভাসটা বাংলাদেশে থাকালীনই দৃশ্যমান হয়েছিল। ২০০২ সালে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা করেন। তারপর কিছু দিন কাজ করেন সাভারের প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেখানে তিনি একটি নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

ড. বিজন বলছিলেন, ‘যে পরীক্ষা প্রচলিত পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ওপর করা হতো। আমি সেটা কাঁচের ওপর করি এবং সফল হই। কাঁচের ওপর করার সুবিধা হলো ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যায়।’

বিষয়টি নিয়ে ফ্রান্সের একটি জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন ড. বিজন। সেই লেখার সূত্র ধরে সিঙ্গাপুর সরকারের থেকে প্রস্তাব আসে সে দেশের সিভিল সার্ভিসে যোগদানের।

‘চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেই সিঙ্গাপুর যাওয়ার। তাদের কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়। সিঙ্গাপুর সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়। তাদেরও কেউ কেউ অন্যান্য দেশ থেকে গেছেন। সিঙ্গাপুর সরকার সারা পৃথিবী থেকে দেশ গঠনে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ বাছাই করে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিই।’

ড. বিজন ২০০২ সালে সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিসে কাজ শুরু করেন। শুরুতে তাকে ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক বছর ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা করেন। তারপর  পৃথিবীতে শুরু হয় সার্স ভাইরাসের তাণ্ডব। সার্স ভাইরাস গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। সিঙ্গাপুরের অত্যাধুনিক ল্যাবে শুরু করেন গবেষণা। সফলভাবে ২০০৩ সালে উদ্ভাবন করেন সার্স ভাইরাস শনাক্তের কিট। যা দিয়ে সিঙ্গাপুর, চীন সার্স ভাইরাস মোকাবিলা করে। সিঙ্গাপুর, চীনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম ছড়িয়ে পড়ে ড. বিজন কুমার শীলের।

২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিসে থেকে গবেষণা করেন। সে সময় আমেরিকার ক্যালিফোনিয়া-ভিত্তিক একটি প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘এমপি বায়োকেমিক্যালস  এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেড’ থেকে তার কাছে প্রস্তাব আসে। আরও বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা ও বিপুল আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় তিনি ‘গবেষণা পরিচালক’ হিসেবে সেখানে যোগদান করেন।

পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে। সিঙ্গাপুর অফিসে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের সব দেশের গবেষণা পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি ‘মাল্টিশিয়র হেপাটাইটিস-সি র‌্যাপিড টেস্ট পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করেন। প্রচলিত পদ্ধতির পরীক্ষায় হেপাটাইটিস-সি নেগেটিভ বা পজিটিভ শনাক্ত করা যায়। ড. বিজনের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে নেগেটিভ বা পজিটিভ জানার পাশাপাশি রোগটি এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিরূপণ করা যায়। ফলে রোগের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সহজ হয়।

ড. বিজন কিছুদিন কাজ করেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে। তারপর ফিরে আসেন সিঙ্গাপুরে। গবেষণা কনসালটেন্সি করতে থাকেন। তার নামে যুক্ত হয় ১৪টিরও বেশি পেটেন্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে তার উদ্ভাবিত পাঁচটি কিট আছে। যা ইউরোপিয়ান কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত।

বাংলাদেশের সঙ্গে ড. বিজনের সব সময়ই একটি সম্পৃক্ততা ছিল। আইচেক হেলথ সলিউশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে তার গবেষণাগত টেকনোলজি ট্রান্সফারের জন্য ২০১৯ সালে তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে যাওয়া আসা করেন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন চীনের উহানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। জানুয়ারির প্রথমদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বিষয়ে অবহিত করেন। ড. বিজনের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গবেষণার বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্মত হন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিনি সিঙ্গাপুরে চলে যান। বিএমআরসির করোনাভাইরাস বিষয়ক একটি সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আসেন ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে। তখনও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে তার কথা হয়। আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যান এবং করোনাভাইরাস নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গবেষণার জন্যে সপ্তাহখানেক পরে বাংলাদেশে আসেন।

‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্যার আমার বহুদিনের পরিচিত। নতুন করোনাভাইরাস সার্স ভাইরাসের রূপান্তরিত রূপ। সার্স ভাইরাসের সঙ্গে যার মিল ৮২ শতাংশ। আমার সার্স ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও কিট উদ্ভাবনের কথা তাকে জানালাম। বললাম, সুযোগ দিলে আমি গণস্বাস্থ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে চাই। তিনি রাজি হলেন। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করলাম। পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণা করতে থাকলাম। নতুন করোনাভাইরাস আমার কাছে যেহেতু নতুন নয়, ফলে আমরা চার জনের গবেষক দল অল্প সময়ের মধ্যে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট উদ্ভাবন করতে সক্ষম হলাম। সিঙ্গাপুরে সার্স ভাইরাসের যে কিট উদ্ভাবন করেছিলাম, এটা তারই ধারাবাহিকতা।’-বলছিলেন ড. বিজন।

ড. বিজন কুমার শীল সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের বিজ্ঞানীকে সিঙ্গাপুর ডেকে নিয়ে নাগরিকত্ব দিল। তার মেধা কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, চীন সার্স ভাইরাস প্রতিরোধ করলো। আর এখন তিনি নিজে থেকে বাংলাদেশে আসলেন। তার মেধাকে আমরা কাজে লাগাব না? তার উদ্ভাবিত কিটের অনুমোদন দেব না? তাকে আমরা এ দেশে রাখতে পারবো না? আজ তিনি চলে গেলে কার ক্ষতি? আমাদের ক্ষতি, বাংলাদেশের ক্ষতি। ড. বিজনের তো কোনো ক্ষতি নেই। সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বহু দেশে এখানকার চেয়ে দশগুণ বেশি বেতনে তিনি কাজ করতে পারবেন। প্রয়োজনহীন লাখ লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের কতোজনের ওয়ার্ক পারমিট আছে? আমরা তো ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করতে দেওয়ার কথা বলছি না। ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেছি। নিশ্চয়ই ওয়ার্ক পারমিট পাবো।’

‘আমি সিঙ্গাপুরে কাজ করেছি। যদি আর্থিক বিষয়টি বিবেচনা করেন, অনেক উচ্চ বেতনে কাজ করেছি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় যে বেতন বা আর্থিক সুবিধা পেয়েছি, সেসব বিবেচনায় বাংলাদেশে কাজ করে তার ১০ ভাগের এক ভাগ সুবিধাও পাচ্ছি না। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন কাজ করছি? আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যে, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক দেশে কাজ করার সুযোগ আমার এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমার কাজের কারণেই থাকবে। সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়ে আজ আমি মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। অর্থের পেছনে ছোটার মানসিকতা আমার কখনো ছিল না এবং এখনো নেই। যা আছে, তা হচ্ছে— দায়বদ্ধতা। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা’-বলছিলেন ড.বিজন।

‘বাংলাদেশে আমার জন্ম, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। এই দেশের কাদা মাটিতে বেড়ে উঠেছি। কলেজে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে মাঠে কৃষি কাজ করেছি। এক জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে যা দরকার, এখন হয়ত আমার সবই হয়েছে। আমার দুই সন্তান সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করছেন। স্ত্রী তাদের দেখাশোনা করছেন। মাঝে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দেখতেও যেতে পারিনি। একটা বিষয় অনুভব করি, মাতৃভূমির জন্য আমার কিছু করার আছে। সেই ভাবনা থেকেই দেশে এসে গরিবের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্যে কাজ শুরু করি’- যোগ করেন তিনি।

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ‘জিআর কোভিড-১৯ র‌্যাপিড ডট ব্লট কিট’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাংলাদেশ না চাইলে তিনি যে কোনো সময় চলে যাবেন। তার জন্যে পৃথিবীর দরজা খোলা। যারা বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন, ড. বিজনের মান সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। উন্নত বিশ্বের বিপুল আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাকে তুচ্ছ করে তিনি সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়াধীন থাকায় তিনি বেতনও নিচ্ছেন না।’

সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক রুমের একটি বাসায় তিনি থাকেন। বাসার ব্যালকনিটি ড. বিজনের খুব পছন্দের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময় কাটে করোনাভাইরাসের সঙ্গে, ল্যাবে। রাতে রুমে ফিরে প্রিয় ব্যালকনিতে ধ্যানে বসেন। ক্যাম্পাসে তার সম্পর্কে প্রচলিত হয়ে গেছে, আন্তর্জাতিকমানের এই বিজ্ঞানী নির্মোহ সন্ন্যাসীর জীবন-যাপন করছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago