পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পারাপারে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ট্রাক চালকদের

নাব্যতা সংকটের কারণে এক সপ্তাহ ধরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ফেরি পারাপারে অতিরিক্ত সময় লাগায় ট্রিপ সংখ্যা কমেছে। ফলে, ঘাট এলাকায় আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। অন্যদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখায় ওই রুটের গাড়িগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া আসায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
এই পথে যাত্রীবাহী ও জরুরি পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের জট লেগে থাকছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ট্রাকের চালক ও সহযোগীরা।
আজ দুপুরে ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ট্রাক টার্মিনালে আড়াই শ, ঘাটের কাছে মহাসড়কে দেড় শ এবং পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে উথলী সংযোগ সড়কে দুই শ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে, যাত্রীবাহী গাড়ির তেমন চাপ ছিল না। যাত্রীবাহী গাড়ি ঘাটে আসামাত্রই পার হতে পারছে। ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা আটকে থাকা ট্রাকের চালক, সহযোগীরা দুর্ভোগে রয়েছেন
মঙ্গলবার সকালে পাটুরিয়া ঘাটে আসা মাগুরাগামী ট্রাক চালক আলী হোসেন বলেন, ‘প্রথমে মহাসড়কে এবং পড়ে টার্মিনালে এস আটকা পড়েছি। ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। আজও পার হতে পারব কিনা বলতে পারছি না। ঘুম-খাওয়া-শৌচাগারসহ নানা সমস্যা রয়েছে। হাতের টাকা শেষ হয়েছে। ফেরির জন্য অপেক্ষা বাড়লে না খেয়ে থাকতে হবে। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।’
অন্য প্রায় সব ট্রাক চালকের অভিযোগের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় খুলনাগামী সাদ্দাম হোসেনের গলায়। তিনি বলেন, ‘আমি ঘাটে আটকা পড়েছি ২০ ঘণ্টা পার হয়েছে। মনে হচ্ছে আজ পার হতে পারব না। ভোগান্তি নিরসনে সরকারের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিস) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘নাব্যতা সংকটের কারণে ৩০ আগস্ট থেকে ফেরিগুলো বিকল্পপথে চলাচল করছে। এ কারণে ফেরিগুলোকে মূল চ্যানেল থেকে কিছুটা ঘুরপথে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় কিছুটা বেশি লাগছে। মূল চ্যানেলে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সেখানে ড্রেজিং চলছে। আশা করছি আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলতে পারবে এবং সমস্যার সমাধান হবে।’
বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাম হোসেন বলেন, সাধারণত এই পথে প্রতিদিন আড়াই হাজার গাড়ি চলাচল করে। গত কয়েকদিন ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এখানে গাড়ির চাপ বেড়েছে। নাব্যতা সংকট এবং ঘাটে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় যাত্রী ও জরুরি পণ্যবাহী গাড়িগুলো পারাপারে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আটকা পড়ছে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। ১৭টি ফেরি দিয়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ফেরি পারাপার করছি।’
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশী লাগছে। এতে ট্রিপ সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে যাত্রীবাহী ও জরুরী পণ্যবাহী গাড়িকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। একারণেই ঘাট এলাকায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকা থাকছে। পুলিশ সদস্যরা ঘাটের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কাজ করছেন। ঘাট এলাকায় অতিরিক্ত ট্রাকের চাপ থাকায় কিছু ট্রাককে উথুলী সংযোগ সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোকেও পার করা হবে।’
Comments