বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ

হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে চাপ বেড়েছে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ)। এই দৃশ্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসতে যেতে হবে আরও বেশ খানিকটা পথ।
ছবি: আমরান হোসেন

হাসপাতালে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে চাপ বেড়েছে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ)। এই দৃশ্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসতে যেতে হবে আরও বেশ খানিকটা পথ।

গত ২ আগস্ট অন্তত চার হাজার ২২ জন কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ২৮৩ জন গুরুতর অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এর এক মাস পর সারা দেশ যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে, তখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা চার হাজার ৪৯ এবং তাদের মধ্যে ৩০০ জন রয়েছেন আইসিইউতে। এই পরিসংখ্যান গত মঙ্গলবার পর্যন্ত।

খুব শিগগির এই মহামারি শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু, জনসাধারণের চলাফেরা এবং কাজের ওপর সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। এতে করে বেড়ে যেতে পারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।

অন্যান্য বিধিনিষেধের সঙ্গে শিথিল হয়ে গেছে গণপরিবহনের যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনাও। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পরিবহনের সিটের সংখ্যা অনুযায়ী যাত্রী নিয়ে চলাফেরা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত বলা যাবে না যে এটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে তা প্রভাব ফেলবে সংক্রমণের হার কমার উপর।

বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পেছনের যুক্তি সবার সামনে তুলে ধরা উচিত।’

করোনা সংক্রমণ বন্ধে প্রথম পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রণয়ন করা কৌশলের খুব সামান্যই সরকার কার্যকর করে। পরবর্তীতে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর দুটি অঞ্চল ও বেশ কয়েকটি জেলায় অতিরিক্ত সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করে তা ‘লকডাউন’ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

করোনা প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া সর্বশেষ দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা গেছে গত জুলাইয়ে।

২ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত ২২ জন মারা গেছেন এবং ১ সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৩৫।

গত ২ আগস্ট মোট শনাক্তের হার ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ। বর্তমানে সংক্রমণের গড় হার ২০ দশমিক ১৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, এখনও এই হার বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি।

পরিস্থিতি কি ভালো হয়েছে?

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৪৩টি কোভিড-১৯ হাসপাতালে ১৪ হাজার ৮৪৭টি সাধারণ ও ৫৫০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৭৪৯টি সাধারণ ও ৩০০ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন।

সাধারণ শয্যার রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগের মোট দুই হাজার ৩০৬ জনের মধ্যে দুই হাজার ৭৯ জনই ঢাকা শহরের। চট্টগ্রাম বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬৩৭ করোনা রোগী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার মোট ৪২৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৫১৬ জন।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, গণপরিবহন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার কারিগরি কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করেনি।

অবশ্যই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য। কিন্তু, এতে করে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশিকা উপেক্ষা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসে আরও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, গণপরিবহণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না।’

জনসাধারণের স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্দেশিকা জারি করেই সরকারের কর্তব্য শেষ হয় না। নির্দেশিকা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হয়।’

নতুন শনাক্তের হার কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলেই নতুন সংক্রমণ কমেছে, নাকি পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় শনাক্তের হার কমছে তা জানতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

শনাক্তের হার কাঙ্ক্ষিত পাঁচ শতাংশে পৌঁছতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, সংক্রমণের হার বেশি এমন দেশগুলোর তালিকায় এখনও বাংলাদেশ রয়েছে।

গত সোমবার তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।’

বাংলাদেশে শনাক্তের হার এখনও ২০ শতাংশের বেশি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গণপরিবহণের জন্য তৈরি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা, বিশেষত শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে এখনই শিথিলতা দেওয়া উচিত না।’

তার মতে, ‘যদি গণপরিবহণে শারীরিক দূরত্বের ব্যাপারে শিথিলতা আসে, তাহলে সংক্রমণ অবশ্যই বাড়বে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago