র্যাগিং না র্যাগ-ডে, বিভ্রান্তিতে ঢাবি প্রশাসন
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ‘র্যাগ-ডে’কে ‘অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নীতিবহির্ভূত’ উৎসব হিসেবে উল্লেখ করে এটির উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিনসহ ঢাবির আরও অনেক শিক্ষক প্রশ্ন তোলেন যে, ‘র্যাগিং’ নাকি ‘র্যাগ-ডে’ নিষিদ্ধ? ঢাবির বর্তমান প্রশাসন কি র্যাগিং আর র্যাগ-ডে’র অর্থ জানেন না?
ঢাবির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ আজ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ‘র্যাগ-ডে’ নিষিদ্ধ করা হয়নি।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে গতকাল এক ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আজ আবার তা ‘অসাবধানতাবশত ভিন্নভাবে উপস্থাপিত’ হয়েছে বলে অন্য সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটা তো পরিচালক সেখানে (বিজ্ঞপ্তিতে) স্পষ্ট করেছেন। সেখান থেকে আবার জানার প্রয়োজন কেন?’
যেহেতু এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাই আপনি যদি এটা নিয়ে বলতেন?, তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনার তো অবকাশ নেই। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের (সিদ্ধান্ত) যতটুকু, সেটাই লিখবেন। তিনি শব্দগুলো যেভাবে শুনেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে দিয়েছেন। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মূল বিষয় তো অ্যাকাডেমিক বিষয়। সেখানে এই বিষয়গুলো এসেছে, একটা কমিটি করা হয়েছে, কমিটির বিষয়টা তিনি ওভারসাইট (অনিচ্ছকৃত ভুল) করেছেন।’
সভার সিদ্ধান্ত যে ভুলভাবে গণমাধ্যমে এসেছে, এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?, জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘ওখানে (বিজ্ঞপ্তিতে) কারণ বলেছে না? (এটা নিয়ে) বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করো না। সেখানে (বিজ্ঞপ্তিতে) স্পষ্ট করে কথাগুলো বলা হয়েছে। তিনি (জনসংযোগ দপ্তরেরর পরিচালক) বোধ হয় দুঃখ প্রকাশও করেছেন। যেহেতু (সভাটি) অনলাইনে হচ্ছিল, প্রসিডিংসও (সভার কার্যবিবরণী) তৈরি হয়নি তখনও, অনেকগুলো কথা শুনছিলেন, প্রসিডিংস তো পরে তৈরি হয়, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে করে যেতে হয়েছে, সাংবাদিক বন্ধুরা তাড়া দিচ্ছিল, ফলশ্রুতিতে একেবারেই অনিচ্ছাকৃতভাবে এটা হয়েছে।’
কোনো বিভ্রান্তি তৈরি করতে নয়, বরং বিষয়টি স্পষ্ট করতেই আপনার মন্তব্য জানতে চেয়েছি, বললে তিনি বলেন, ‘তিনি (জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক) তো পরিষ্কারই লিখেছেন। আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যেটা ভেবেছে, সেটাই। পরে রেজিস্ট্রারের তরফ থেকে আরও স্পষ্ট করে তথ্যগুলো তিনি (জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক) সকালে বোধ হয় নিয়েছেন। আমি আজকে যখন দেখলাম যে “অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে র্যাগ-ডে”, এটার আবার একটা হেডলাইন কীভাবে হয়। তিনিও তো একজন সাংবাদিক, তিনি হয়তো খুব ক্যাচি (আকর্ষণীয়) করে কোনো একটা টাইটেল দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এটা এখানে আসে কেন? এত ভালো ভালো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে এখানে। ইথিক্যাল রিভিউ কমিটি আছে, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় আছে, রিসার্চ আছে, পাবলিকেশন আছে শতবর্ষ উপলক্ষ্যে, এগুলো হলো মেইন এরিয়া। আর এটি (র্যাগ-ডে’র বিষয়ে আলোচনা) হলো একেবারে শেষের একটি বিষয়। তখন আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক একইসঙ্গে কথা বলেছেন, বিষয়গুলো তাদের নজরে আনলেন যে, স্যার একটু শৃঙ্খলা-নিয়মের মধ্যে, আমাদের একই সময়ে অনেকগুলো বিভাগ একত্রে (র্যাগ-ডে) করে, এসব ক্ষেত্রে কীভাবে শিক্ষার্থীদের সেফটি, একইসঙ্গে অনেকগুলো বিভাগ করলে পারস্পরিক কোথাও জায়গাগুলো নিয়ে ঝামেলা না হয়।’
‘(সভার) একেবারে শেষে, আমার মনে পড়ে একদম শেষে যখন আলোচনাগুলো হলো, তাৎক্ষণিক লিখতে গিয়ে একেবারে সংক্ষিপ্ত দুইটা বাক্য লিখে দিয়ে দিয়েছেন’, যোগ করেন ঢাবি উপাচার্য।
গতকাল র্যাগ-ডে বাতিলের বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘র্যাগ-ডে’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিধি মোতাবেক এটির অনুমতি নেই৷
এ বিষয়ে আজ দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি বলেছি, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘র্যাগ-ডে’র বিষয়টি আলোচনা হয়েছে”। আজকে আমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে, সিদ্ধান্তের ভেতরে ছিল একটা নীতিমালার ভিত্তিতে সেটা করা হবে। যেটা আজকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর অনেক আগে থেকেই ঢাবিতে বিধি মোতাবেক র্যাগ-ডে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং এই র্যাগ-ডে বন্ধের পেছনে একটা ঘটনাও আছে। তো র্যাগ-ডে যে বন্ধ আছে এটাতে কোনো দ্বিধা নেই। যেহেতু বিষয়টা পুনরায় আলোচনা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আজকে আরও পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছে, এই প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। পরবর্তীতে নীতিমালার ভিত্তিতেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
আরও পড়ুন:
Comments