আঙ্গুস মাছের পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

Angush Fish.jpg
অঞ্চলভেদে আঙ্গুস মাছ আগুন চোখা, আংরোট ও কারসা নামে পরিচিত। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ গবেষণায় আরেকটি সফলতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউটের নীলফামারীর সৈয়দপুর উপকেন্দ্র থেকে এবার আঙ্গুস মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে।

অঞ্চলভেদে আঙ্গুস মাছ আগুন চোখা, আংরোট ও কারসা নামে পরিচিত। আঙ্গুস মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Labeo angra’। একসময় বৃহত্তর সিলেট এবং রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে প্রচুর পাওয়া গেলেও সুস্বাদু এ মাছটি এখন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এ মাছের কথা অনেকেই এখন ভুলতে বসেছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো এ মাছের প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করায়, এখন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। চাষাবাদের মাধ্যমে এর উৎপাদনও বৃদ্ধি করা যাবে।

মিঠা পানির আঙ্গুস মাছ আকারে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একটি স্ত্রী আঙ্গুস মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা আকারভেদে ২০ হতে ৫০ হাজার। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি আঙ্গুস মাছ ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম হলেই পরিপক্ব ও প্রজননক্ষম হয়ে যায়। এর প্রজননকাল মে থেকে আগস্ট। তবে জুন-জুলাই মাস সর্বোচ্চ প্রজননকাল। একই বয়সের প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের চেয়ে আকারে বড় হয়।

মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র থেকে উত্তরবঙ্গের তিস্তা, চিকলী ও আত্রাই নদী থেকে আঙ্গুসের ১৫-২০ গ্রাম ওজনের পোনা সংগ্রহ করা হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মূলত এ মাছটি ধরা পড়ে। পোনা সংগ্রহের পর সৈয়দপুর গবেষণা উপকেন্দ্রের পুকুরে প্রতিপালন করে ব্রুড মাছ তৈরি করা হয়। চলতি প্রজনন মৌসুমে হরমোন ইনজেকশন দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়।

গবেষক দলে ছিলেন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রশীদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শওকত আহমদ।

ড. রশীদুল হাসান জানান যে, আঙ্গুস মাছের কৃত্রিম প্রজনন তুলনামূলকভাবে জটিল এবং নার্সারি ব্যবস্থাপনায় পোনার মৃত্যুর হার বেশী। এ বিষয়ে অধিকতর গবেষণা চলমান রয়েছে।

এ মাছটি খরস্রোতা নদী ও প্রবহমান জলাশয়ে পাওয়া যায়। এর বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

প্রজনন সফলতা সম্পর্কে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান যে, দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও বিপন্ন মাছ পুনরুদ্ধারে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। এ লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে এবং ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে ২৩ প্রজাতির বিপন্ন ও দেশীয় ছোট মাছের প্রজনন ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে পুকুরে দেশীয় মাছের উৎপাদন গত ১২ বছরে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

ইনস্টিটিউটে বর্তমানে রাণী মাছ, কাকিলা, পিয়ালী, বাতাসী, কাজলী, শালবাইম, ডেলা ও বোল মাছ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান মহাপরিচালক।

Comments

The Daily Star  | English
election before ramadan 2026 in Bangladesh

Election could be in February, Yunus indicates

He said it will be possible if preparations completed, sufficient progress made in reforms and judicial matters

5h ago