শীর্ষ খবর

পুড়ে যারা চলে গেলেন তাদের পরিবার বাঁচবে কীভাবে?

এক সময় বাড়ি, জায়গা, জমি সবকিছুই ছিল সাংবাদিক নাদিম আহমেদের। কিন্তু, বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সেই সম্পত্তি চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দেন। এর কিছুদিন পরই বাবা-মা দুইজনই মারা যান।
শোকে কাতর স্বজনের আহাজারি। ছবি: সনদ সাহা

এক সময় বাড়ি, জায়গা, জমি সবকিছুই ছিল সাংবাদিক নাদিম আহমেদের। কিন্তু, বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সেই সম্পত্তি চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দেন। এর কিছুদিন পরই বাবা-মা দুইজনই মারা যান।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে এক রুমের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন নাদিম আহমেদ। স্থানীয় গণমাধ্যমে কাজ করে যে সম্মানী পেতেন তাতেই চলতো সংসার। কিন্তু তা সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। এতকিছুর পরেও কখনো কারো কাছ থেকে ঋণ বা ধার নেননি। কখনো অবৈধ পথে চলেননি, সততার সঙ্গে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। সেই পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তার স্ত্রী লিমা আহমেদ।

লিমা আহমেদ আহাজারি করে বলেন,‘ছেলেকে নিয়ে আমি কই যামু, কি করমু। এখনো তো ছেলের পড়ালেখা শেষ হয় নাই। কি কাজ করবো। কীভাবে সংসার চলবো।’

রোববার দুপুরে সরেজমিনে শহরের ডনচেম্বার এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত নাদিম আহমেদের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের সঙ্গে।

নিহত নাদিম আহমেদ ভোরের বাংলাদেশ টুয়েন্টি ফোর ডটকমের ফটো সাংবাদিক ছিলেন। তিনি শহরের ডনচেম্বার এলাকার মজিদ মিয়ার ছেলে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নাদিম সবার ছোট।

কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে নাদিমের স্ত্রী লিমা আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনার শুরুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যায়। এ ছাড়াও আরও অনেক রোগ ছিল। এতো কিছুর পরও কষ্ট করে সংসার চলতো। একমাত্র ছেলে নাফি আহমেদ বার একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। এতো কষ্টে সংসার চলতো, কিন্তু কখনো ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়নি। আশা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে। ভালো কোনো চাকরি করবে। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। আমার ছেলের পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাবে।’

নাদিম আহমেদের মতোই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ইমান হোসেন ও আমজাদ হোসেন। একই বিস্ফোরণের ঘটনায় তারা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন বার্ন ইউনিটে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

তাদের দুইজনের স্বজন মো. রুবেল বলেন, ‘ইমান হোসেন ও আমজাদ হোসেন দুজনই আমার দুই বোনের স্বামী। ইমাম হোসেন গার্মেন্টসে সুইংয়ের কাজ করেন। আর আমজাদ হোসেন রিকশা চালক। দুইজনেরই স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে কষ্টে করে সংসার চলতো।’     

তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার থেকে দুই বোন তাদের স্বামীর সঙ্গে ঢাকায়। দুই সন্তানকে খালি বাসায় রেখে গেছে। ডাক্তার বলছে তাদের স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন যদি তাদের কিছু হয় তাহলে সব স্বপ্ন ও আশা শেষ। সন্তানদের ভবিষ্যতও শেষ হয়ে যাবে।’

বিস্ফোরণের পরদিন রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বাবা জুলহাস মিয়া। বিস্ফোরণের দিন মারা যায় তার সন্তান। স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা রাহিমা বেগম। শনিবার সন্তানের লাশ দাফনের পর আজকে স্বামীর লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি এলাকায় যাচ্ছেন।

আহাজারি করে জুলহাসের মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেলো। ছেলেও নাতি সবই নিয়ে গেছে আল্লায়। আমারে কেন রেখে গেলো। আমারে নিয়ে যাও আল্লাহ। আমি কি নিয়ে বাঁচমু।’

জুলহাসের বড় ভাই ইবাদুল মিয়া বলেন, ‘স্বামী না থাকলে ছেলেকে ধরে একটা মানুষ বাঁচে, আবার ছেলে না থাকলে স্বামীকে নিয়ে বাঁচে। রাহিমার তো স্বামী-ছেলে দুটাই নেই। কি নিয়ে বাঁচবে, কোন ভরসায় বেঁচে থাকবে। আমরা যে কী বলে সান্ত্বনা দিবো সেই ভাষা নেই। রাহিমা বার বার কান্না করে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।’

মৃত্যুর সঙ্গে বার্ন ইউনিটে লড়াই করছেন আব্দুল সাত্তার। এখন পর্যন্ত পরিবারের কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। 

আব্দুল সাত্তারের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা একমাত্র ছেলে সাত্তার। গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালাতো। ওর নিজেরও ১০ বছরে মেয়ে ও ১২ বছরের ছেলে আছে। ওরাও স্কুলে পড়ালেখা করে। এখন ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে। কে দেখবে?’

এদিকে মানুষের মুখে বাবা হান্নান সাউদের মৃত্যুর খবর শুনে চিৎকার করে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছিলেন শাহজালাল। ফোনে স্বজনদের কাছ থেকে নিশ্চিত হন এখনো জীবিত আছে তার বাবা। তখনই শান্ত হয় সে।

শাহজালাল বলেন, ‘আমি এবার এইচএসএসসি পরীক্ষা দিতাম। কিন্তু করোনার জন্য পরীক্ষা দিতে পারি নাই। বাসার সবাই ঢাকার হাসপাতালে। আমি একা বাসায় আছি। আমার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আব্বার অবস্থা কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’

আহত ও নিহতদের স্বজনরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা তারা পাননি। নিজেদের খরচে চিকিৎসা ও দাফনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের দাফনের টাকা নেই তারাও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়েছেন।’

উল্লেখ্য গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ৩৯ জন দগ্ধ হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত থেকে রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

4h ago