ভ্যাপসা গরমে ত্বকের যত্ন

ছবি: স্টার

ত্বক মানবদেহের একক বৃহৎ অঙ্গ। শরীরের আবরণ হিসেবে কাজ করে বিধায় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বাগ্রে ত্বকে পরিলক্ষিত হয়। ষড়ঋতুর প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে লক্ষণীয় পরিবর্তন না হলেও, শীত ও গরমের প্রভাব ত্বকের ওপর সুস্পষ্ট। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম ও আদ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকে বিশেষ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

গরমে ত্বকের ওপর পরিবর্তন দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ১। সূর্যালোকের কারণে ত্বকের পরিবর্তন ও ২। গরমে সৃষ্ট ঘামের কারণে পরিবর্তন।

সূর্যালোকের কারণে ত্বকের পরিবর্তন

সূর্যালোকের কারণে ত্বকে সোলার ডার্মাটাইটিস বা সানবার্ন, সোলার একজিমা, সোলার আর্টিকেরিয়া, অ্যাকনিটিক রেটিকুলয়েড, ত্বকের ক্যানসার ও মেছতা বা ক্লোজমা হতে পারে। সূর্যালোকের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিই সাধারণত এর জন্য দায়ী। গরমে সূর্যালোকের কারণে হিট-স্ট্রোক বা সানবার্নও হতে পারে।

গরমে সৃষ্ট ঘামের কারণে পরিবর্তন

গরমের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ত্বকের সোয়েট গ্লানড বা ঘর্মগ্রন্থি নিঃসরিত ঘাম তৈরি হয়। ঘামের কারণে ঘামাচি দেখা দেয়। এ ছাড়া, ঘামে ডার্মাটাইটিস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের রোগ বিস্তার লাভ করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের রোগ যেমন: ইমপেটিগো বা সামার বয়েল, ফলিকুলাইটিস, ইরাইসিপেলস, ফারাঙ্ককেল, কারবাঙ্কেল ইত্যাদি। শিশুরা গরমে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, যা সামার বয়েল নামে পরিচিত।

গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে, যা ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে টিনিয়া ভারসিকলার বা ছুঁলি, ক্যানডিডিয়াসিস, ইরাইথ্রাসমা, দাদ জাতীয় রোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস, টিনিয়া পেডিস, টিনিয়া কর্পোরিস) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গরম ও ঘামের কারণে ব্রণ ও অ্যালার্জিও বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশে এ সময়ে মশার প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যে কারণে মশাবাহিত রোগ যেমন: ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে ত্বক লালচে ছোপছোপ চুলকানি হয়।

চিকিৎসা

গরমে ত্বকের সমস্যা জটিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রতিরোধের উপায়

* সরাসরি সূর্যালোকে যাবেন না। ছাতা, হ্যাট ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

* দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকবেন না। সান ব্লকের লোশন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন।

* ভারী জামা-কাপড়, টাইট-ফিট অন্তর্বাস পরিহার করুন।

* নাইলন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি সিনথেটিক পোশাক পরিধান না করে, সুতি ও প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পোশাক ব্যবহার করুন।

* একবার ব্যবহার করা পোশাক ও অন্তর্বাস পুনরায় ধৌত করার পর ব্যবহার করুন।

* ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলুন বা মুছে নিন। প্রয়োজনে গোসল করতে পারেন।

* প্রচুর পরিমাণ পানীয় পান করুন।

* ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন না। পাউডার ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে ঘামাচিসহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

* সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran and Israel agree to a ceasefire

"It has been fully agreed by and between Israel and Iran that there will be a Complete and Total CEASEFIRE... for 12 hours, at which point the War will be considered, ENDED!"

1d ago