বরগুনায় খাদ্যগুদামের বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল চুরি
বরগুনার আমতলী উপজেলা খাদ্যগুদামে রক্ষিত সরকারি চালের বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই চাল চুরির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। পরে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সারোয়ার মাহমুদ খাদ্যগুদামটি পরিদর্শন করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমতলী খাদ্যগুদামে ২ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে। ওই চালের বস্তা থেকে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সহায়তায় প্লাস্টিকের সরু পাইপ দিয়ে চাল চুরি করে আসছে। এভাবে প্রতি বস্তা থেকে তিন-চার কেজি চাল চুরি করে গোপনে খোলা বাজারে বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ গুদাম শ্রমিকদের।
তবে, পাইপ দিয়ে চাল চুরির এ অভিনব ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সারোয়ার মাহমুদের নজরে আসে। পরদিন শুক্রবার রাতে তিনি খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেন।
গুদাম পরিদর্শন শেষে মহাপরিচালক পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লিয়াকত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পটুয়াখালী সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিএম সফিকুল ইসলাম ও বরগুনা সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক ধ্রুব মণ্ডল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্যগুদামের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল সরিয়ে আসছিলেন। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তিনি তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চুপ রাখতেন। তাতে কাজ না হলে তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতেন।
খাদ্যগুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের এই কুকর্মের প্রতিবাদ করলে আমাকে ভয়ভীতি দেখান। গত মাসে আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করলে আমাকে ম্যানেজ করার জন্য টাকার প্রলোভন দেখান।’
অভিযুক্ত আমতলী ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ তার গুদামের নয় দাবি করে বলেন, ‘আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসাতে একটি গ্রুপ এ কাজ করেছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘খাদ্য গুদামের ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে চাল চুরির ঘটনা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments