আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা গ্রাম মানচিত্র থেকেও মুছে দিচ্ছে মিয়ানমার

তিন বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম কান কিয়ায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর পুরো গ্রাম বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকেও গ্রামটিকে মুছে ফেলা হয়েছে।
Kan-Kya-1.jpg
মিয়ানমারের নতুন মানচিত্রে উল্লেখ নেই রোহিঙ্গা গ্রাম ‘কান কিয়া’র। ছবি: রয়টার্স

তিন বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম কান কিয়ায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর পুরো গ্রাম বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্র থেকেও গ্রামটিকে মুছে ফেলা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী গত বছর মিয়ানমার সরকার যে নতুন মানচিত্র তৈরি করেছে, তাতে কান কিয়া গ্রামের নাম নেই।

নাফ নদী থেকে প্রায় ৩ মাইল (৫ কিমি) দূরে কান কিয়া গ্রামটিতে কয়েকশ মানুষ থাকতেন। ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের সময় প্রায় ৭৩ হাজার রোহিঙ্গা সেখান থেকে পালিয়ে যান।

জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নিধনের একটি উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, কান কিয়া গ্রামটি আগে যেখানে ছিল সেখানে এখন বেশ কয়েকটি সরকারি ও সামরিক ভবন গড়ে উঠেছে। গুগল আর্থের ছবিতে পুলিশ ঘাঁটির জন্য দেওয়া আঁকাবাঁকা বেড়াও দেখতে পাওয়া যায়। ‘প্ল্যানেট ল্যাব’ থেকে রয়টার্সের কাছে সেখানকার কয়েকটি ছবি পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওই গ্রামটিতে আগে থেকেই বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গ্রামটি এতোই ছোট যে গুগল ম্যাপেও এটি চোখে পড়তো না।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ এ বছর দেশটির নতুন ম্যাপ বানিয়েছে। মিয়ানমারের সরকারি মানচিত্রের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ‘ম্যাপিং ইউনিট’ নিজেদের ম্যাপ তৈরি করে। জাতিসংঘের অধীনে বিভিন্ন সংস্থাগুলো ওই ম্যাপ ব্যবহার করে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, নতুন ‍মানচিত্রে গুঁড়িয়ে ফেলা গ্রামের নাম আর নেই। নামহীন ওই জায়গাটিকে এখন কাছের মংডু শহরের বর্ধিত অংশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

২০১৭ সালে অভিযানের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী কান কিয়ার মতো কমপক্ষে চারশ গ্রাম ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’। ভূ-উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানানো হয়।

ধ্বংস হওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে অন্তত এক ডজন গ্রামের নাম মানচিত্র থেকেও মুছে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা কান কিয়ার কাছের আরেকটি গ্রামের গ্রাম প্রধান ছিলেন।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘তাদের (মিয়ানমার সরকার) উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে আর ফিরে যেতে না পারি।’

মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাখাইন রাজ্যের পুনর্গঠনের কাজ পর্যবেক্ষণ করে। তাদের কাছে গ্রামের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কারণ এবং কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা হবে তা জানতে চাওয়া হলে, এসব বিষয়ে রয়টার্সকে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে জানার জন্য জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে (জিএডি) যোগাযোগ করতে বলা হয়। রয়টার্স জানায়, সেখানে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বছরের শুরু থেকে জাতিসংঘের মানচিত্র বিভাগ মিয়ানমারের কমপক্ষে তিনটি মানচিত্র পেয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রামের নাম নেই কিংবা অন্য জায়গার অংশ হিসেবে সেগুলোকে মানচিত্রে দেখানো হচ্ছে।

জাতিসংঘ জানায়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক রোহিঙ্গা অধিকার সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন জাতিসংঘের কাছে গ্রামের নাম মুছে ফেলার অভিযোগ করার পর জুনে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি মানচিত্র তারা ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। জাতিসংঘ পরে সেখানকার গ্রামবাসী ও শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত মানুষের ওপর সরকারের নীতিমালার প্রভাব নির্ধারণের জন্য একটি গবেষণা শুরু করে। তবে, এই গবেষণা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক দূত ইয়াংহি লি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শরণার্থীদের নিজেদের মাটিতে ফেরা কঠিন করে দিচ্ছে। এমন একটি জায়গা, যার কোনো নাম নেই বা যেখানে তাদের বসবাসের কোনো চিহ্ন নেই, সেখানে তারা ফিরবে কী করে? এভাবে সেখান থেকে তাদের শেকড় নির্মূল করে দেওয়া হচ্ছে।’

এসব কাজের জন্য মিয়ানমার সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে জাতিসংঘ প্রকারান্তরে তাদের এ কাজের অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে বলেও মনে করেন লি।

তিনি বলেন, ‘সেখানে (জাতিসংঘ) এমন কোনো নেতা নেই যিনি বলবেন, থামুন, আমরা এটা চালিয়ে যেতে দেব না।’

এভাবে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বের চিহ্ন মুছে ফেলার বিষয়ে জাতিসংঘ মিয়ানমারকে আটকাবে কি না, এ বিষয়ে জানতে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago