বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে মিঠা পানির মাছ রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ

benapole landport
ফাইল ফটো

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি মিঠা পানির সাদা মাছ রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে দ্বিগুণ পরিমাণ বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তবে দাম কম থাকায় ভারতীয় রুই মাছ আমদানি হচ্ছে এ বন্দর দিয়ে।

মাছ চাষিরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত মাছ স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি দ্বিগুণ হওয়ায় ভারত থেকে মাছ আমদানির প্রয়োজন নেই।

গত তিন বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৮৯ হাজার ২০৫ মার্কিন ডলার মূল্যের বাংলাদেশি মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। যার পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮২ কেজি। একই সময় ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৯৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ ডলার মূল্যের মাছ। যার পরিমাণ এক কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৮ কেজি মাছ।

বেনাপোলের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে মাছ রপ্তানি হয়েছে ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩০ কেজি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৪৫ হাজার আট কেজি মাছ। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩২৫ কেজি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৮ কেজি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ২৩ হাজার ৯১৫ কেজি।

করোনার কারণে এপ্রিল ও জুন মাসে বাংলাদেশ থেকে মাছ রপ্তানি হয়নি।  জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ সাত হাজার ৩৯২ কেজি মাছ। যার মূল্য পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৪৮০ ডলার। জুন ও জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৭ কেজি। যার দাম ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৯ মার্কিন ডলার।

গত আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে তিন লাখ আট হাজার ৯৬৬ কেজি মাছ, যার দাম সাত লাখ ৭২ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার।

একই মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৫ কেজি মাছ। যার দাম ১১ লাখ ৯১ হাজার ৯১৬ মার্কিন ডলার।

শার্শা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি হয় রুই, কাতলা, সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির মাছ। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় পাবদা, গুলশা, টেংরা, পাঙাশ, হিমায়িত চিংড়ি, কার্প, ভেটকিসহ অন্যান্য মাছ। 

এর মধ্যে পাবদা মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশই পাবদা। পাবদা মাছ বেশি উৎপাদিত হয় যশোরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে যেসব মাছ আমদানি হচ্ছে এগুলো এখন স্থানীয়ভাবেই ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। আর আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমদানি বন্ধ হলে আমাদের দেশের চাষিরা ব্যাপক লাভবান হবেন।’

যশোরের শার্শা উপজেলায় চাহিদার তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে জানিয়ে আবুল হাসান বলেন, ‘এ উপজেলার ১৫টি বাঁওড়, ২৭১টি ঘের, ১০টি বিল ও ছয় হাজার ৬১৯টি পুকুরে মোট ছয় হাজার ২৩৯ হেক্টর জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এখানে বছরে ২২ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। কিন্তু স্থানীয় চাহিদা মাত্র সাত হাজার ৫৭২ টন।’

স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত মাছ অন্যান্য এলাকায় ও ভারতে রপ্তানি করা হয়।

যশোরের শার্শা উপজেলার মাছ রপ্তানিকারক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভারতে পাবদা ও কার্প জাতীয় মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা সাধারণত পাবদা, টেংরাসহ অন্যান্য মিঠা পানির মাছ রপ্তানি করে থাকি।’

যশোরের শার্শায় আফিল একোয়া ফিসে শিং, মাগুর, পাবদা, রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের চাষ হয়। এই প্রতিষ্ঠানের কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করে থাকি। পরে ট্যাঙ্কের মাধ্যমে রেণু নার্সিং করে পুকুরে মজুদ করার পর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। এসব মাছ আমরা দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করি।’

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘দাম কম হওয়ায় ভারত থেকে রুই-কাতলা মাছ আমদানি হচ্ছে। আমদানি করা মাছের চেয়ে আমাদের দেশের রুই মাছের স্বাদ অনেক ভালো।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago