কুড়িগ্রামে গো-খাদ্যের সংকট নিরসনে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ

গো-খাদ্যের সংকট নিরসনে কুড়িগ্রামে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ শুরু হয়েছে। জেলার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজারহাট উপজেলায় ২০ জন নারী কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে তারা এই পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করছেন। মাটি ছাড়া মাচায় ঘাস চাষের এ পদ্ধতি দেখতে গ্রামের কৃষকরাও ভিড় করছেন। এ ঘাস চাষে লাভবান হওয়া গেলে গ্রামের কৃষকরাও এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষকরা এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Hydroponic grass.jpg
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ। ছবি: স্টার

গো-খাদ্যের সংকট নিরসনে কুড়িগ্রামে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ শুরু হয়েছে। জেলার কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজারহাট উপজেলায় ২০ জন নারী কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে তারা এই পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করছেন। মাটি ছাড়া মাচায় ঘাস চাষের এ পদ্ধতি দেখতে গ্রামের কৃষকরাও ভিড় করছেন। এ ঘাস চাষে লাভবান হওয়া গেলে গ্রামের কৃষকরাও এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষকরা এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ হাইড্রোপনিক’র ম্যানেজিং পার্টনার ও প্রদান নির্বাহী (সিইও) নাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে ঘাষ চাষ করে কৃষকরা গো-খাদ্যের সংকট উত্তরণ করতে পারবেন এবং অবশ্যই তারা লাভাবান হবেন। এ পদ্ধতিতে একজন কৃষক সাড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা খরচ করে এক কেজি ঘাস উৎপন্ন করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাস পুষ্টিগুণ-সম্পন্ন এবং এ ঘাস খাওয়ালে গাভী ১২-১৫ শতাংশ বেশি দুধ দিতে সক্ষম হবে।’

‘প্রতি এক কেজি ভুট্টা বীজ থেকে ৬-৭ কেজি ঘাস উৎপন্ন হচ্ছে। স্বল্প জায়গায় মাচা তৈরি করে চারটি তাকের মাধ্যমে আট দিনের মধ্যে এ ঘাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি ঘাস ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। প্রথম দুই দিন দিতে হয় পানির স্প্রে। আর বাকি ছয় দিন দিতে হয় প্লান্ট নিউট্রিয়ান্ট-এ এবং প্লান্ট নিউট্রিয়ান্ট-বি ভিটামিন স্প্রে। ৫০০ মিলিলিটার প্লান্ট নিউট্রিয়ান্ট ৩০ লিটার পানির সঙ্গে মিশ্রিত করে কৃষকরা তা ২৪-৩০ দিন ব্যবহার করতে পারবেন’, বললেন নাহিদ হোসান।

উলিপুর উপজেলার চকচকারপাড় গ্রামের বন্যাদুর্গত কৃষক রজব আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষের ওপর তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘাষ উৎপন্ন করছি। বাড়ির উঠানে তিন ফিট বাই ছয় ফিটের একটি মাচা তৈরি করে চারটি তাকের মাধ্যমে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাষ চাষ করছি গেল ১০ দিন ধরে। প্লাস্টিকের চ্যাপ্টা থালায় ভুট্টা বীজ রেখে প্রত্যেক তাকে দুই দিন করে রেখে আট দিন পর ঘাস পাচ্ছি।’

একই উপজেলার সরকারপাড়া গ্রামের বন্যাদুর্গত কৃষক মফজুল ইসলামের স্ত্রী অজিনা বেগম বলেন, ‘মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদনের এ পদ্ধতিতে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু, এখন আমিও এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপন্ন করছি দুই সপ্তাহ ধরে। গ্রামের লোকজনও আমার কাছে আসছেন এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদন দেখতে। অনেকে পদ্ধতিও জেনে নিচ্ছেন। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাস আমার পালিত দুটি গরুর সবচেয়ে প্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সাবেরকুটি গ্রামের মৃত নুর ইসলামের স্ত্রী বন্যাদুর্গত কৃষক রাহিলা খাতুন জানান, এখন তিনি প্রতি কেজি বীজ থেকে পাঁচ কেজি ঘাস পাচ্ছেন। তবে, পরবর্তীতে ৬-৭ কেজি পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে একটু ভুল হচ্ছে। সে কারণে উৎপাদন কম পাচ্ছি। আস্তে আস্তে দক্ষ হচ্ছি হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদন করতে। আপাতত আমি এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাস অন্যান্য গো-খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছি।’

kurigram-hydroponic-grass (1).jpg
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ। ছবি: স্টার

এই গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন (৮০) বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথম দেখলেন মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদন পদ্ধতি। গ্রামের নারী কৃষক রাহিলা লাভবান হলে আমরাও এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদন করব। এতে আমাদেরকে যেভাবে গো-খাদ্যের সংকটে পরতে হয়, সেটি আর হবে না।’

কুড়িগ্রামের প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমানে গরু পালন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, কমেছে ঘাসের জমি। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাষ চাষ ছাড়া গো-খাদ্যের সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদনের খরচ বাজার থেকে গো-খাদ্য কেনার খরচের চেয়ে কম। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাষ পুষ্টিগুণ-সম্পন্ন। বিশেষ করে ভূমিহীন গরু পালনকারী চাষিদের জন্য এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

বাংলাদেশ হাউড্রোপনিক’র কারিগরী সহায়তায় ইউএনডিপি’র আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)।

ইউএনডিপি’র স্বপ্ন প্রকল্পের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর আহমেদুল কবীর আকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক চলছে। ২০ জন নারী কৃষককে পরীক্ষামূলক এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং তারা এ পদ্ধতিতে ঘাস উৎপাদন করছেন। প্রথম অবস্থায় তারা একটু ভুল করছেন কিন্তু, আস্তে আস্তে তাদের দক্ষতা বাড়ছে।’ 

‘বিশেষ করে বন্যার সময় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিলে বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ সফল হলে কুড়িগ্রাম জেলায় এর ব্যাপকতা তৈরি করা হবে’, বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামে স্বপ্ন প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর অরুন কুমার অধিকারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষের ফলাফল জেনে নিচ্ছি এবং তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Banks to freeze accounts of Orion Group chairman, MD, four others

The Bangladesh Financial Intelligence Unit (BFIU) has instructed banks in the country to freeze any accounts owned by Orion Group Chairman Obaidul Karim and its Managing Director Salman Obaidul Karim.

5h ago