শীর্ষ খবর

ভারত-চীন আপাত শান্তি যেভাবে

হিমালয় সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে পাঁচটি বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত ও চীন। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সীমান্ত নিয়ে কয়েক মাসের উত্তেজনার পর দুই দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে সম্মুখসারির সেনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চুক্তি ও প্রোটোকল মেনে চলা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করা এবং উত্তেজনা তৈরি করে তুলতে পারে এমন সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা কিছুটা বিস্ময়করই বলা চলে।
লাদাখের প্যাংগং সো লেক। ফাইল ফটো রয়টার্স

হিমালয় সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে পাঁচটি বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত ও চীন। বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সীমান্ত নিয়ে কয়েক মাসের উত্তেজনার পর দুই দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে সম্মুখসারির সেনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চুক্তি ও প্রোটোকল মেনে চলা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করা এবং উত্তেজনা তৈরি করে তুলতে পারে এমন সব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা কিছুটা বিস্ময়করই বলা চলে।

এর আগে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে জানানো হয়, ‘কূটনৈতিক বৈঠক ব্যর্থ হলে চীনকে অবশ্যই সামরিক পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে। ভারত যদি চরম জাতীয়তাবাদী শক্তি থেকে চীনা নীতি অনুসরণ করে চলে, তবে তার চরম মূল্য দিতে হবে।’

এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও জানান, ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার সংকল্প নিয়ে ‘কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকা উচিত নয়।''

ওই বিবৃতিগুলো দুই দেশের সীমান্ত সংকটের প্রতিফলন। দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মুখোমুখি হয়ে আছে। গত জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা যায়। চীনের পক্ষ থেকে কোনো হতাহতের খবর জানানো হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে দুই দেশই এখনো বিশাল সেনা মোতায়েন করে রেখেছে এবং ওই সেনা প্রত্যাহার করা সহজ হবে না।

উইলসন সেন্টারের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানসহ অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, উভয় দেশই মূলত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে যে যুদ্ধ এমনকি সীমিত সংঘর্ষও দুই পক্ষের জন্য লাভজনক হতে পারে না।

কুগেলম্যান বলেন, ‘এটি উভয় দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়কর হতো। এই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এতোই বেশি যে তাদের যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হওয়ার কথা না।’

শুক্রবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে আলাদাভাবে একটি বৈঠকে বসেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বহু বছর ধরে বেইজিংয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। চীনা কূটনীতিকদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।

কুগেলম্যান জানান, ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনায় ভূমিকা রাখে। আর এ কারণেই হয়তো দুই দেশ সম্মতিতে পৌঁছাতে পেরেছে।

ভারত ও চীনের যুদ্ধে না জড়ানোর আর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে আবহাওয়া। লাদাখের এলএসি বরাবর আবহাওয়া খুবই বৈরী। লাদাখ ভারতের সবচেয়ে উঁচু মালভূমি এবং শীতল প্রান্তর। শীতকালে সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়। পাহাড়ি ঝর্ণা ও জলাভূমি এবং কিছু ঢাল ও অল্প পরিমাণ সমতল জমি ছাড়া সেখানকার বেশিরভাগ অংশের বালিমাটিতে কোনো গাছপালা হয় না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) বিনোদ ভাটিয়া বলেন, ‘সেনারা কঠোর পরিস্থিতিতে অপারেশন চালাতে সক্ষম। কিন্তু সুযোগ পেলে উভয় সেনাবাহিনীই যুদ্ধ এড়াতে চাইবে।’

এই মূহূর্তে দুই দেশের যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষেত্রে আরও সংকট রয়েছে। ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। দেশটির অর্থনীতি ইতোমধ্যেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। যে কোনো সশস্ত্র সংঘাতই এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে, চীনে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে চীনের বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতি এবং হংকংয়ের বিতর্কিত নিরাপত্তা আইনকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে চীন।

ওয়াশিংটনের সিমিটসন সেন্টার চীন প্রোগ্রামের পরিচালক ইউন সান জানান, কী কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে সেটার ওপরই নির্ভর করছে তারা কত দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাবে। উত্তেজনার কারণ হতে পারে, লাদাখের প্রত্যন্ত ও নাজুক এলাকায় একটি ভারতের বানানো একটি নতুন রাস্তা। কয়েক শ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি ২০১৯ সালে বানানো হয় এবং সেটিকে মালভূমির ওপরে একটি বিমান ঘাঁটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

তবে ইউন সানের ধারণা, ওই রাস্তাটিই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার একমাত্র কারণ না। তার মতে, এই অঞ্চলকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া একটি আইন প্রত্যাহার করার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের উন্নতিসহ অনেকগুলো কারণই এখানে ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের হয়তো মনে হয়েছে যে, ভারতের পাশাপাশি ওয়াশিংটনকেও একটি সতর্কবার্তা দেবে। তবে তারা যেটা হিসাব করেনি তা হলো, ভারত পিছিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানাবে।’

‘মার্কিন কর্মকর্তারা করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগ করেন। এর ফলেই চীন কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।’

এদিকে সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার হবে কিনা তা নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি অনুমান করা কঠিন। ওয়াশিংটনের সিমিটসন সেন্টারের চীন প্রোগ্রামের পরিচালক ইউন সান বলেছেন, যৌথ বিবৃতিতে এ ব্যাপারে বিশদ বিবরণ নেই।

প্রথমত, বিবৃতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ লাইন (এলএসি) নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত সীমান্তে এলএসি’র বিভিন্ন পয়েন্টে দুই দেশেরই সেনাবাহিনী এখনো অবস্থান করছে। সুতরাং এই সমস্যা নিয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’

জেনারেল ভাটিয়া বলেছেন, সেনা প্রত্যাহার করতে সাধারণত সময় প্রয়োজন হয়। এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বেশি সময় নেবে।

তিনি বলেন, ‘অঞ্চলটি অনেক বড়। কমান্ডারদের বোঝাপড়ার জন্য সময় লাগবে। যখন সামরিক স্তরের আলোচনা হবে তখন দুই পক্ষেরই উত্তেজনা বেশি থাকবে, আবেগ থাকবে।’

এদিকে, গালওয়ান সংঘর্ষের পরও দিল্লি ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা তাদের মন্তব্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমণাত্মক শব্দ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন বলে জানান বিশ্লেষকেরা। 

কুগেলম্যান বলেন, ‘কেউই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে যে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন তা বাতিল করতে চাননি।’

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুজন ১৮ বার সাক্ষাৎ করেছেন। কুগেলম্যান  বলেন, ‘তবে সম্প্রতি সম্পর্ক উন্নয়নের সমস্তই বিফলে গেছে। এখন চীন ও ভারত কীভাবে তাদের জনগণের কাছে ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ ফিরিয়ে আনার ঘোষণার বাস্তবায়ন করে সেটাই দেখার বিষয়।’

Comments

The Daily Star  | English

Deadline for tax return filing extended by two months

The National Board of Revenue (NBR) extended the deadline today for the submission of income tax returns for individual taxpayers by two months to the end of January next year, according to an order issued today.

37m ago