সোনাহাট স্থলবন্দরে মরণব্যাধি সিলিকোসিস

৬ মাসে ৩ পাথরভাঙা শ্রমিকের মৃত্যু, অসুস্থ ২০ জনের বেশি

মরণব্যাধি সিলিকোসিসের থাবা পড়েছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে সোনাহাট স্থলবন্দরে। গেল ছয়মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন জন পাথরভাঙা শ্রমিক এবং অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ২০ জনের বেশি। আক্রান্তরা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না।
Kurigram silicosis.jpg
সোনাহাট স্থলবন্দরে কোনো ধরনের পিপিই ব্যবহার ছাড়াই পাথরভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: স্টার

মরণব্যাধি সিলিকোসিসের থাবা পড়েছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে সোনাহাট স্থলবন্দরে। গেল ছয়মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন জন পাথরভাঙা শ্রমিক এবং অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ২০ জনের বেশি। আক্রান্তরা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না।

মৃত শ্রমিকরা হলেন- স্থলবন্দরের পরশুরামকুটি গ্রামের ফখর আলীর ছেলে আব্দুল খালেক (৩৮), বানরকুটি গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৪০) ও বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজের স্ত্রী মালেকা বেগম (৩৫)।

এসব শ্রমিক চার বছর ধরে সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথরভাঙার কাজ করতেন। কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ব্যবহার ছাড়া পাথরভাঙার কাজ করতেন তারা। এতে পাথরের গুড়ো নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে ফুসফুসের ক্ষতি করে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

পাথরভাঙা শ্রমিক আব্দুল আজিজ জানান, তার স্ত্রী পাথরভাঙার কাজ করতেন। দীর্ঘদিন কাজ করার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘনঘন কাশি, বুক ব্যথা এমনকি সারা শরীরে ব্যথা ছিল, পরে আর সুস্থ হয়ে উঠেননি।

‘পাথরের গুড়া ভেতরে ঢুকে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে’ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমিও অসুস্থ বোধ করছি।’

সোনাহাট এলাকার অসুস্থ পাথরভাঙা শ্রমিক সামিনা বেওয়া (৪০) জানান, তিনি দীর্ঘ চার বছর ধরে পাথরভাঙার কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাচ্ছেন, কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠছেন না।

‘শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হয় ও খাদ্যে অরুচি ধরছে। শারীরিক দুর্বলতা অনেক। এখন আর কাজ করতে পারছি না। উন্নত চিকিৎসা করার সামর্থ্যও নেই’, বলেন তিনি।

একই এলাকার অসুস্থ অপর পাথরভাঙা শ্রমিক আবুল হোসেন (৪৩) বলেন, ‘পাথরের গুড়ো নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে যাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। কেউ আমার খোঁজ-খবর নিচ্ছে না।’

সোনাহাট স্থলবন্দরে লেবার হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘২০ জনের বেশি শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য সহায়তা দেওয়া হয়, যা তাদের খাবার কিনতেই খরচ হয়ে যায়।’

সরকারিভাবে অসুস্থ পাথরভাঙা শ্রমিকদের চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সোনাহাট স্থলবন্দরে লেবার হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গেল পাঁচ বছর ধরে সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথরভাঙার কাজ হচ্ছে। এখানে প্রায় ৩০০ পাথরভাঙা মেশিনে প্রায় দশ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এই স্থলবন্দর দিয়ে শুধু পাথর ও কয়লা আমদানি করা হয়। অন্য কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় এখানকার শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে পাথরভাঙার কাজ করেন।’

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নিহত শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো রেকর্ড নেই। সিলিকোসিস একটি মরণব্যাধি। পাথরের গুড়ো নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।’

‘আমি স্বেচ্ছায় সোনাহাট স্থলবন্দরে গিয়ে শ্রমিকদের খোঁজ নেব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সেখানে বিশেষ মেডিকেল টিম বসিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব,’ বলেন ডা. সায়েম। 

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

9h ago