নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন নেইমার

চাইলেই যে নিজেকে শান্ত রাখতে পারতেন, তা পরবর্তীতে অনুভব করেছেন তিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হালের অন্যতম সেরা এ খেলোয়াড়। কিন্তু রেফারি ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের সেদিনের কর্মকাণ্ডে বেজায় হতাশ তিনি।
neymar
ছবি: এএফপি

ফরাসি লিগ ওয়ানের নতুন মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচটা ভালো কাটেনি নেইমারের। তার দল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ফের হেরে তো গিয়েছেই, বড় নিষেধাজ্ঞার খড়গের শঙ্কায়ও রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। কারণ, ম্যাচের শেষ দিকে মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। আলভারো গঞ্জালেজের মাথার পেছনে আঘাত করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন। পরে অলিম্পিক মার্সেইয়ের এ ডিফেন্ডারের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ করেন নেইমার। তবে চাইলেই যে নিজেকে শান্ত রাখতে পারতেন, তা পরবর্তীতে অনুভব করেছেন তিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হালের অন্যতম সেরা এ খেলোয়াড়। কিন্তু রেফারি ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের সেদিনের কর্মকাণ্ডে বেজায় হতাশ তিনি।

গেল রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত হয় পিএসজি-মার্সেইয়ের মধ্যকার ঘটনাবহুল ম্যাচটি। নেইমার ভেবেছিলেন, আঘাত করার বিষয়টি হয়তো রেফারির চোখ এড়িয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা হয় উল্টো। ভিএআরে নিশ্চিত হয়ে লাল কার্ড দেখানো হয় নেইমারকে। সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘গতকাল (রবিবার) আমি বিদ্রোহ করেছি। আমাকে লাল কার্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কারণ, যে আমার ক্ষতি করেছে, তাকে আঘাত করতে চেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, আমি কিছু না করে মাঠ ছাড়তেই পারি না। কারণ, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, দায়িত্বে থাকা লোকেরা কিছু করবে না, দেখবে না বা বিষয়টি উপেক্ষা করে যাবে।’

বর্ণবাদী আচরণের স্বীকার হওয়ার কথা ফের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ম্যাচে আমি বরাবরের মতো খেলতে চেয়েছিলাম। তবে ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আমি সফল হইনি, আমি বিদ্রোহ করেছি। আমাদের খেলাধুলায় আগ্রাসন, অপমান, গালিগালাজ করা এসব লড়াইয়ের অংশ। আপনি স্নেহপরায়ণ হতে পারবেন না। তবে আমি এই লোকটিকে (আলভারো) আংশিকভাবে বুঝতে পারছি। এসব (তার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব) ম্যাচের অংশ। তবে বর্ণবাদ ও অসহিষ্ণুতা গ্রহণযোগ্য নয়।’

নিজের গায়ের রঙ নিয়ে গর্বিত নেইমার যোগ করেছেন, ‘আমি কালো, আমি একজন কালোর সন্তান এবং আমি একজন কালোর নাতিও। আমি গর্বিত এবং আমি নিজেকে কারও চেয়ে আলাদা চোখে দেখি না। গতকাল আমি চেয়েছিলাম যে, ম্যাচের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা (রেফারি ও অন্যান্য অফিসিয়াল) নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান দেখাবেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন যে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের কোনও জায়গা নেই।’

neymar
ছবি: রয়টার্স

প্রশ্ন হচ্ছে, চাইলেই কি নেইমার নিজেকে মাঠে সংযত রাখতে পারতেন? তিনি নিজে অন্তত তা-ই মনে করছেন। কিন্তু রেফারিদের কাছ থেকে যথার্থ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ তার, ‘আমার কি বিষয়টা (আঘাত না করা) এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল? আমি এখনও জানি না... আজ (সোমবার) ঠাণ্ডা মাথায় বলছি, হ্যাঁ। তবে আমি ও আমার সতীর্থরা যথাযথভাবে রেফারিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম এবং আমাদেরকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। এটাই হলো ব্যাপার!’

নিজের শাস্তি অবশ্য মেনে নিয়েছেন নেইমার। পাশাপাশি বর্ণবাদ দূর করতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এ তারকা, ‘আমরা যারা বিনোদনের সঙ্গে জড়িত তাদেরও নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন ঘটানো দরকার। প্রতিটি ক্রিয়া চালিত করে প্রতিক্রিয়ার দিকে। আমি আমার শাস্তি মেনে নিয়েছি। কারণ, আমার বিশুদ্ধ ফুটবলের পথ অনুসরণ করা উচিত ছিল। কিন্তু বর্ণবাদ বিদ্যমান। এটি বিদ্যমান। আমাদের এটি বন্ধ করতে হবে। আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে!’

গায়ের রঙের উপরে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই জানিয়ে তার মত, ‘লোকটি বোকা ছিল। এতে জড়িয়ে পড়ে আমিও বোকার মতো কাজ করেছি। তবে এখনও মাথা উঁচু করে চলার সৌভাগ্য আমার রয়েছে। আমাদের সবার মানা দরকার যে, সমস্ত কালো ও সাদা মানুষ আসলে একই। আপনি কালো কিংবা সাদা কিনা আমি জানতে চাই না এবং আমাদের এ বিষয়গুলো নিয়ে জড়িয়ে পড়া উচিতও নয়। গায়ের রঙ আমরা নিজেরা তৈরি করি না। ঈশ্বরের সামনে আমরা সবাই সমান।’

বর্ণবাদকে ‘না’ জানিয়ে সবশেষে ২৮ বছর বয়সী তারকা বলেছেন, ‘এখন... গতকাল আমি খেলায় হেরে গিয়েছি এবং আমি মেজাজ হারিয়েছিলাম... ওই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কিংবা বর্ণবাদী আচরণ উপেক্ষা করা, কোনোটাই যে ভালো ফল দেবে না সেটা আমি জানি। আমাদের আবারও দেখা হবে এবং এটাই আমার পথ, ফুটবল খেলব.... শান্তিতে থাকুন! শান্তিতে থাকুন! তুমি জানো যে, তুমি কী বলেছ... আমি জানি আমি কী করেছি। বিশ্বজুড়ে আরও ভালবাসার প্রয়োজন। বর্ণবাদকে না বলুন।’

উল্লেখ্য, ফরাসি গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, স্প্যানিশ খেলোয়াড় আলভারোকে আঘাত করায় সাত ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন নেইমার।

Comments

The Daily Star  | English

Malaysian PM Anwar Ibrahim arrives in Dhaka

This is the first visit by a head of a foreign government since the Yunus-led interim govt took charge

51m ago