রোহিঙ্গাদের জীবন সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন‌্যাশনাল

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনে প্রভাব ফেলে এমন যে কোনো সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ ও নিজেদের কথা বলার অধিকার থাকা আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন‌্যাশনাল।
amnestyinternational-logo.jpg
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনে প্রভাব ফেলে এমন যে কোনো সিদ্ধান্তে তাদের অংশগ্রহণ ও নিজেদের কথা বলার অধিকার থাকা আবশ্যক বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন‌্যাশনাল।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ না থাকায় তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও চলাচলের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অধিকারের মতো মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তিন শতাধিক রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রসঙ্গে সংস্থাটি জানায়, ‘এটি বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি বালুচর। যার বাসযোগ্যতা নিয়ে জাতিসংঘ এখনো তার মূল্যায়ন জানায়নি।’

দুটি সাক্ষাৎকার থেকে ভাসানচরে পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যদের হাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা জানা গেছে বলছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ সরকারকে এই অভিযোগের পরিপূর্ণ ও যথাযথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার দুর্বল ব্যবস্থাপনার নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ‘এভাবে দ্বীপটিতে দীর্ঘ সময় রোহিঙ্গাদের আটকে রাখা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ৯ ও ১২ নং ধারার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় তার আবাসস্থল নির্ধারণের স্বাধীনতা আছে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিবের কার্যালয়ের পরিচালক ডেভিড গ্রিফিথস বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভাসানচর থেকে সব রোঙ্গিাদের নিরাপদে কক্সবাজারের ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা এবং ভাসানচরে তাদের স্থানান্তরের যে কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কোনো ধরনের জোর ছাড়াই তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা।’

বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর বরাত দিয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ১০০’র বেশি রোহিঙ্গা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সেসব ঘটনার একটিরও তদন্ত হয়নি। সন্দেহভাজন কাউকে বিচারের আওতায়ও আনা হয়নি।’

কক্সবাজারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পাঁচ জন রোহিঙ্গার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি জানায়, ‘প্রত্যেকটি ঘটনার ক্ষেত্রে কাকতালীয়ভাবে একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে, যেখানে ভুক্তভোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে “বন্দুকযুদ্ধে” নিহত হয়েছেন।’

বাংলাদেশ সরকারকে এসব অভিযোগ ও উদ্বেগ খতিয়ে দেখে বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের পরিপূর্ণ, স্বাধীন, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ বছর ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ছয় জন রোহিঙ্গা করোনায় মারা গেছেন এবং ৮৮ জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিষয়ে ১০ জন রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের মধ্যে পাঁচ জন জানিয়েছেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে, করোনার সময়ে ঘরোয়া সহিংসতা বেড়েছে।’

রোহিঙ্গা নারীরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে মানবপাচার, যৌন হয়রানি ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

ডেভিড গ্রিফিথস বলেন, ‘কক্সবাজারের শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং তারা নানা রকম হয়রানি ও বৈষম্যের হুমকির সম্মুখীন। কর্তৃপক্ষ ও সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলোর উচিত সব ধরনের পাচার, যৌন নির্যাতন ও বৈষম্যের অভিযোগের তদন্ত করা।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করার এক বছর পর গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে রোহিঙ্গারা জানান, ক্যাম্পের কিছু জায়গায় ইন্টারনেটের গতি বাড়লেও এখনো সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই নিষেধাজ্ঞা রোহিঙ্গাদের কোভিড-১৯ বিষয়ক জরুরি জীবন রক্ষাকারী তথ্য জানা থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাইরে তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।’

মহামারির ফলে আরোপিত নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্যাম্পগুলোর চলমান শিক্ষা সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এ ছাড়া, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১০ হাজার শিশুকে নিয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে পড়ার কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা, স্থানীয় কমিউনিটির সদস্য, বিভিন্ন দেশে থাকা রোহিঙ্গা, মানবাধিকারকর্মী ও মানবিক সেবা সহায়তাকর্মীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে জন্মভূমিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াসহ তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের যে কোনো বিষয়ে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা আহ্বান জানায়।

Comments

The Daily Star  | English
Asif Nazrul

CSA will be repealed: Law Adviser Asif Nazrul

Law Adviser Asif Nazrul today said the government will scrap the controversial Cyber Security Act and formulate a new one to ensure citizens’ safety in cyberspace

44m ago