নাটকীয়ভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার পর একদিনের মধ্যে নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। ভারতের ওই ঘোষণা আসার পর রাজধানীর অনেক ক্রেতা রাতেই পেঁয়াজ কিনতে ও মজুদের জন্য বাজারে ছুটেছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালান পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর দিনেই ভারতের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসে।

সোমবার ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, সবজিবাজার, পাড়া-মহল্লার সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে গত বছরের পেঁয়াজের আকাশ ছোঁয়া দামের প্রসঙ্গ উঠে আসে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় চাহিদা মেটাতে দেশে এখনো পেঁয়াজের উদ্বৃত্ত আছে।

মঙ্গলবার ইউএনবির এক খবরে জানানো হয়, ভারত সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পেঁয়াজ রপ্তানিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম জানান, রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানার পরপরই নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে বিষয়টি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরা হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে সারাদেশে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও মঙ্গলবার থেকে কেজি প্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০০ টাকা দরে।

ঢাকায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা সোমবার পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ছিল। অন্যদিকে, আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে যেগুলো সোমবার পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হতো।

ঢাকার এক বিক্রেতা বলেন, ‘আমি সোমবার সকালে আমার দোকানে দুই বস্তা পেঁয়াজ এনেছিলাম, তবে সন্ধ্যার ঠিক পরেই বেশ কয়েকজন দোকানে এসে সব পেঁয়াজ আধা ঘণ্টার মধ্যে কিনে নিয়ে যান। সাধারণত এই দুই বস্তা পেঁয়াজ শেষ হতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে।’

ধূপখোলা, সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার ও শ্যামপুরের পাইকারি বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম আগের দিনের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার দোকানদাররা প্রায় ১০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।

শ্যামপুর পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আগের দিনের তুলনায় দাম বেড়েছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত।

শ্যামপুর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দাম বেড়েছে। ভারত আবারও রপ্তানি শুরু করলে দাম কমে আসবে।’

এদিকে, এক দিনে দাম দ্বিগুণ হয়ে গেলেও পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতারা। আরও দাম বৃদ্ধির আশায় তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পাইকাররা জানান, ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে একদিনে পেঁয়াজের দাম ৩৫-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা হয়ে গেছে।

রাজশাহী নগরীর বাজারগুলোতে গতকাল ৮০ টাকা দরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। দুদিন আগে এর দাম ছিল ৬২ টাকা।

ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ‘দেশীয় চাহিদা মেটাতে আমাদের প্রতি মাসে ১ দশমিক ৮ লাখ থেকে ২ লাখ টন পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আমাদের প্রায় ৮ লাখ টন পেঁয়াজ দরকার। আমাদের ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আছে, যার মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টন ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে।’

জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারের হাতে ভালো মজুদ আছে।’

তিনি আরও জানান, সরকার তুরস্ক, মিয়ানমার ও চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের আকাশ ছোঁয়া দামে লাগাম টেনে ধরতে সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

The Daily Star, HSBC honour high achievers in O- and A-Level exams

To commemorate the victims of the July Uprising, the programme began with a one-minute silence, followed by the rendition of the national anthem

1h ago