শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম শামাকে স্মরণ
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শামার স্মরণ ও আলোচনা সভা গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৭ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে মারা যান আমিনুল ইসলাম।
সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ তাদের বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পেরে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। বার্তায় তিনি বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে শ্রমিক নেতৃত্বে উঠে আসা খুব সাধারণ ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের জন্য এটি আরও কঠিন। কিন্তু এটি দরকার, বাংলাদেশের জন্য, শ্রমিক আন্দোলনের জন্য। আমিনুল ইসলাম শামা সেরকমই একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। অনেক নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি শ্রমসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি এ কাজ ক্লান্তিহীনভাবে করে গেছেন। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন তখন তাকে দেখেছি, তার কাজও দূর থেকে দেখেছি। এদেশের শ্রমিক আন্দোলন যখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে তখন আমিনুল ইসলাম শামার চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।’
সভার শুরুতে আমিনুল ইসলাম শামার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। আমিনুল ইসলাম শামা এবং শ্রমিক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় ১ মিনিট নিরবতা।
স্মরণ সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আজকের পশ্চিমা গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক যাত্রায় যা কিছু অর্জন, তা এসেছে শ্রমিক আন্দোলনের হাত ধরে। শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, নারীদের ভোটাধিকার, কথা বলার অধিকার বা মত প্রকাশের অধিকার সকল কিছুই শ্রমিক আন্দোলনের ভেতর দিয়েই অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে আজকে আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, যে গণতন্ত্রহীনতার মধ্যে আছি সেটার কারণও গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব। গত তিন দশকে শ্রমিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে সরকারি দলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রমিক আন্দোলনে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন প্রবেশ করিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম শামা সাভার আশুলিয়া অঞ্চলে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ করে গেছেন। রাষ্ট্রীয় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে এবং লোভ-লালসার হাতছানিকে পাশ কাটিয়ে তিনি শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেছেন, শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক সংগ্রামকে শক্তিশালী করার জন্য সংগ্রাম করেছেন অবিচলভাবে।’
সভার সমাপনি বক্তব্যে তাসলিমা আখতার বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম শামা আজ আমাদের মাঝে নেই। তাকে স্মরণ করতে গিয়ে আমরা অনেক ভালো ভালো কথা বলছি। কিন্তু দোষ-গুণ মিলেই মানুষ। সীমাবদ্ধতাগুলোকেও সমানগুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। তাহলেই আজকের শ্রমিক আন্দোলন আরও জোরদারভাবে সামনে দিকে এগোতে পারবে।’
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, এই অগণতান্ত্রিক ও লুণ্ঠনের শাসনে শ্রমিক আন্দোলন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। শ্রমিক আন্দোলনের একটি বড় অংশ মালিক ও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে শ্রমিকদের দিকভ্রান্ত করছে এবং দ্বিধা বিভক্তি ডেকে আনছে। তাঁর বিপরীতে সততা ও স্বচ্ছতার সাথে শ্রমিক আন্দোলনকে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে যারা পরিচালিত করছেন তাঁদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম শামা অন্যতম। তাঁর কাজ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিক আন্দোলনে ঐক্য ও সংগ্রামের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে হবে।
Comments