ওয়াসার বর্তমান এমডিকে পুনর্নিয়োগের উদ্যোগ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত: টিআইবি
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রকৌশলী তাকসিম এ খানকে আরও তিন বছরের জন্য পুনরায় নিয়োগ দিতে বিশেষ বোর্ড সভা আহ্বান করায় নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘সভার আলোচ্য সূচির ভাষায় এটা স্পষ্ট যে বরাবরের মতো এবারো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ঢাকা ওয়াসার শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় একই ব্যক্তির অনৈতকি ও অবৈধ বহাল অব্যাহত রেখে দীর্ঘকালের লালিত এককেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ অপরিবর্তিত রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে।’
‘ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং অনিয়মের গুরুতর সব অভিযোগ থাকার পরও এই পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও অব্যাহত পুনর্নিয়োগ ওয়াসায় শুদ্ধাচার তথা সার্বিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে বলে মনে করে টিআইবি।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষ তথ্য সূত্র অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার বোর্ডের বিশেষ সভায় শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তাকে আবারও তিন বছর মেয়াদে পুনর্নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল কি না, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী, কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে নবায়ন দান অপরিহার্য, এসব প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কি না তার কোনো উল্লেখ নেই।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রায় দশকব্যাপী দায়িত্বকালে জনদুর্ভোগের বিষয়টি কারো অজানা নয়। টিআইবির গবেষণা ও নির্ভরযোগ্য সংশ্লিষ্ট সব সূত্রে ওয়াসার ছোট-বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভূতপূর্ব বিস্তারের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং তার কোনো কোনো বিষয় তদন্তাধীন। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার প্রধান যেখানে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ কথা বলছেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, তখন এর একটা সুরাহা হবে। আমরা এখন ওয়াসায় শুদ্ধাচার বা সুশাসনের সম্ভাবনার কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছি।’
‘ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ২০০৯ সালে বিতর্কিত নিয়োগের পর প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় টানা পাঁচ মেয়াদে তিনি ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারই তার নিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে আইন ও নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। প্রথমবার নিয়োগের সময় অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দালিলিক নির্দেশ দেওয়া হয়’— বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ আগামী ১৪ অক্টোবর শেষ হওয়ার আগেই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। এটা নিশ্চিত যে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে না বা করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে অপারগতার কারণে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডেরও অপসারণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানাই।’
Comments