চিকিত্সকদের অভিজ্ঞতা ও ওষুধের উন্নতিতে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু কমছে
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে চিকিত্সা পদ্ধতির অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতার ফলে করোনায় গুরুতর আক্রান্তদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আগের তুলনায় বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য বোস্টন গ্লোব জানায়, বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের পর, চিকিত্সাকর্মীরা অন্ধকারে না থেকে ভাইরাসটিকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। কোনো ওষুধগুলো কাজ করতে পারে সেসব খুঁজে বের করেছেন। স্টেরয়েড, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও রক্ত জমাট বাধা ঠেকাতে বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করেন।
এসময়ে হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকরা কখন রোগীদের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন ও কখন প্রয়োজন নেই সেটি বুঝতে শিখেছেন।
মায়ো ক্লিনিকের কোভিড রিসার্চ টাস্ক ফোর্সের প্রধান অ্যান্ড্রু ব্যাডলি বলেন, ‘চিকিত্সক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত চিকিত্সা কৌশল ও দ্রুত চিকিত্সা ব্যবস্থার ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আগের চেয়ে এখন চিকিৎসা দেওয়া সহজ হয়েছে।’
এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘এখনকার চিকিৎসা প্রস্তুতি ফেব্রুয়ারি ও মার্চের তুলনায় অনেক ভালো। রোগ নির্ণয়ও আগের তুলনায় আরও ভালো ও দ্রুত হচ্ছে। কোন ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, কোনটা ব্যবহার করা যাবে না এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বেড়েছে।’
নিউইয়র্কে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কোভিড -১৯ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪ হাজার ৬৮৯ জনের উপর এক গবেষণায় বয়স, জাতি, স্থুলতাসহ অন্যান্য অসুস্থতা রোগীদের মৃত্যুতে কতখানি প্রভাব ফেলে তা যাচাই করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের প্রথম ১৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুর হার ছিল ২৩ শতাংশ। জুনে এটি কমে ৮ শতাংশে নেমে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নিউইয়র্কেই করোনা সংক্রমণ ছড়ায়। সেসময় অনেক মানুষ আক্রান্ত হলেও ডাক্তারদের মধ্যে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিল।
শহরটিতে ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছেন, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে মার্চ ও এপ্রিল মাসে।
করোনার প্রাদুর্ভাব যখন টেক্সাসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়েছে তখন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুতি ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার মতো সময় ছিল।
টেক্সাস কলেজের জরুরি চিকিৎসকদের প্রেসিডেন্ট রবার্ট হ্যানকক বলেন, ‘টেক্সাসের কোনও রোগী শনাক্তের আগেই আমাদের এক ধরনের গাইডলাইন ছিল। আমরা কোভিড নিয়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করতে থাকি।’
মার্চে হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় সামলে চিকিত্সকরা হাসপাতালের আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর যাতে শেষ না হয়ে যায় সেভাবে এগুলো ব্যবহার করা শিখেছেন। তারা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা শিখেছেন। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীদের কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
টেক্সাস মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডায়ানা এল ফাইট বলেন, ‘এখন আমরা জানি কোভিডে অনেকের মৃত্যুর কারণ রক্ত জমাট বাঁধা। আমরা এখন প্রাথমিক অবস্থায়ই রক্ত যাতে জমাট বাধতে না পারে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেই।’
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের এখনও কোনও ওষুধ নেই। তবে চিকিত্সা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবন বাঁচানো যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এখনও ভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারেই জোর দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি এখনও বিপজ্জনক। এমনকি সুস্থ মানুষকেও গুরুতরভাবে আক্রান্ত করতে পারে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের পপুলেশন হেলথ ও মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক লিওরা হরউইটজ বলেন, ‘এমনকি চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি সত্ত্বেও, করোনাভাইরাসকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি ভাবার সুযোগ নেই যে, করোনাভাইরাস এখন একটি অ-বিপজ্জনক রোগ। এটি এখনও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
Comments