সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা মোতায়েন, নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের চিঠি

২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবরর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংদাও শহরে টহল দিচ্ছেন মিয়ানমার আর্মি। এএফপির ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে চিঠি লিখেছে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ চিঠি লেখা হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। একইসঙ্গে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখতে এবং অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, যেকোনো সামরিক বা নিরাপত্তা অভিযান চলাকালে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।

বিষয়গুলো নিরাপত্তা পরিষদ যেন জরুরিভিত্তিতে সদস্যের নজরে আনে, সে বিষয়েও নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

সীমান্তে সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে তাকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে— বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কয়েকটি ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনাগুলো হলো— গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে মংদাওর উত্তরের কয়েকটি স্থানে প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। গত ১০ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নেভির জাহাজ ইনদিন গ্রামের উপকূলে যায় এবং সৈন্যরা সেখানে নামে। পরে তাদেরকে বেসামরিক নাগরিকদের মাছ ধরার ২০টি নৌকায় করে নাফ নদী বরাবর নিগার খু ইয়া গ্রামে নেওয়া হয়। যেটি মংদাও শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তরে ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে মংদাওর একটি গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিন জন রোহিঙ্গা নারীকে আটক করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্র ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ওই পাশ থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে এবং মংদাওর নিকটবর্তী গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে।

এসব ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, ২০১৭ সালে যেভাবে মিয়ানমার তার নাগরিকদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠায় হয়, এই হামলাও একই রকম। যেসব স্থানে এই অভিযানগুলো চালানো হলো, তার ভিত্তিতে এটি অনুমেয় যে, অভিযানের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষের সম্পৃক্ততা নেই।

মিয়ানমার আর্মির অভিযানে সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। স্টার ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে এ ধরনের সহিংসতার কারণে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং তারা গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের নাগরিক ও বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য একাধিকবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। এসব অভিযানের সময় মিয়ানমার যদি সেখানকার বেসামরিক নাগরিক ও তাদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে আবারও মিয়ানমারের নাগরিক ও সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা ঘটবে। তাই বাংলাদেশ জোর দিয়ে বলতে চায়, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা যথাযথভাবে নিশ্চিত করেই মিয়ানমারকে যেকোনো নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা মিয়ানমারেরই দায়িত্ব।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে অবগত না করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সেনা মোতায়েন, বিশেষ করে বেসামরিক নৌকায় করে সৈন্যদের পারাপারের কারণে ভুল বোঝাবুঝি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে প্রতিকূল ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় দুই দেশের সরকারের যে প্রচেষ্টা এবং দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিঘ্নিত হতে পারে। সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সীমানায় শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ উভয় দেশই সমঝোতা স্মারকলিপির অ্যানেক্স ৩’র অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকার বেসামরিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানে সেখানে সীমান্ত মৈত্রী অফিস স্থাপনের বিষয়ে একমত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে মিয়ানমারের গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষের ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলো সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। গত জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থানে প্রায় ৩৫টির মতো গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ৪ জুন দুপুর ৩টা থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটার মধ্যবর্তী সময়ে বিপি-৩৫ নম্বর পিলারের কাছে আন্তর্জাতিক সীমানার মিয়ানমারের দিক থেকে ৫০০ গজ ভেতরে সামরিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যৌথ অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার মিলিটারি ও বর্ডার গার্ড পুলিশ। বাংলাদেশকে অবগত করা ছাড়াই যৌথ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়েছে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে মিয়ানমারের মোতায়েন করা সৈন্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বেসামরিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানে মিয়ানমারের যে প্রতিশ্রুতি, তার প্রতি মিয়ানমারকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এসব দাবির বিষয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার সরকারকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

5h ago